শাংহাই: বোলতার আক্রমণে বেঘোরে মৃত্যু ভাইবোনের। শতাধিকবার তাদের শরীরে হুল ফোটায় বোলতা। পড়শি দেশ চিন থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। এক কৃষকের বিরুদ্ধে ‘অবহেলিত হত্যা’র মামলা দায়ের হয়েছে। অর্থাৎ একজনের অবহেলাপূর্ণ আচরণের জন্য় অন্যের মৃত্যু। ওই কৃষক মৌমাছি পালন করেন বলে জানা গিয়েছে। (China News)

চিনের দক্ষিণ-পশ্চিমের মুদিং কাউন্টির ইউনান থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। South China Morning Post জানিয়েছে, সাত বছরের এক বালক এবং তার দু’বছর বয়সি বোনের উপর হামলা চালায় বোলতার ঝাঁক। তাদের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি ওই ভাইবোন। বেঘোরে মৃত্যু হয়েছে তাদের। (Wasp Attack Kills Siblings)

ওই দুই শিশুর মা-বাবা ঝেজিয়াং প্রদেশে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ঠাকুমা ও ঠাকুরদার কাছে ছিল শিশু দু’টি। ঘটনার দিন ঠাকুমার সঙ্গে নিজেদের ভুট্টার জমিতে গিয়েছিল ভাই-বোন। ঠাকুমা জমিতে কাজ করার সময় খেলতে খেলতে পাইন গাছে ঘেরা একটি জায়গায় সরে যায় তারা। তখনই বিপত্তি ঘটে। 

জানা গিয়েছে, হঠাৎই ভাই-বোনের চিৎকার শুনতে পান গ্রামের এক বাসিন্দা। কে চিৎকার করছে দেখতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন তিনি। শিশুদু’টির কাছে যেতে গেলে তাঁকেও বোলতা কামড়ায়। এর পর ছুটতে ছুটতে ওই দুই শিশুর ঠাকুমাকে ডাকতে ছোটেন তিনি। পড়িমড়ি করে ছুটে এসে বৃদ্ধা প্রথমে নাতিকে টেনে নিয়ে যান। প্রথমে নাতিকেই নাগালের মধ্যে পেয়েছিলেন তিনি। এর পর নাতনিকে টেনে সরিয়ে আনেন। 

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা হয়। কিন্তু তত ক্ষণে মেয়েটি নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। হাসপাতালের ICU-তে ছেলেটিকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পরের দিন সে-ও মারা যায়। তাদের ঠাকুমাকেও বোলতা কামড়েছিল। তিনি এক সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও, বেঁচে ফিরেছেন। পরদিন ওই দুই শিশুর মা-বাবা ছুটে এসেও, তত ক্ষণে সব শেষ।

সংবাদমাধ্যমে শিশুটির বাবা বলেন, “আমার দুই ছেলেমেয়ের গোটা শরীরে বোলতা হুল ফোটায়-হাত, কাঁধ, পা, পিঠ, মাথা, পেট। শরীরের কোনও অংশ বাদ যায়নি।” পরে ফরেন্সিক রিপোর্ট এলে দেখা যায়, ছেলেটির শরীরে ৩০০-রও বেশি বার হুল ফোটায় বোলতার ঝাঁক। ছোট্ট মেয়েটির শরীরে ৭০০-রও বেশিবার হুল ফোটানো হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বোলতার সবচেয়ে বিষাক্ত প্রজাতি, Vespa Veluntina Nigrithorax বা Yellow Legged Hornet-ই শিশুদু’টির উপর হামলা চালায়। 

জানা গিয়েছে, Li পদবীর এক কৃষক ওই বোলতা পালন করছিল। তাঁকে আটক করে এক সপ্তাহ হেফাজতে রেখেছিল পুলিশ। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে তদন্ত এখনও চলছে। মৃত দুই শিশুর পরিবারকে তিনি ৫৬০০ ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪৯ লক্ষ টাকা। Li জানিয়েছেন, আর টাকা নেই তাঁর। দু’বছর ধরে মৌমাছি পালন করে আসছেন তিনি। মৌমাছি ও বোলতার গুটি বিক্রি করেন তিনি, যা চিনে খাওয়ার চল রয়েছে। আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি।