কলকাতা: গান শোনা থেকে সিনেমা দেখা। সব কাজে এখন হেডফোন ব্যবহার করা হয়। কাজে যাওয়া আসার পথে গলায় ঝুলতে থাকে বিজ্ঞানের এই দান। এখন ওয়ারলেস হেডফোন কিনতে পাওয়া যায় প্রায়ই। অনেকে ব্লুটুথ দিয়ে সেটি ফোনের সঙ্গে কানেক্ট করে নেন। যত্রতত্র হেডফোন নিয়ে ঘোরাঘুরির অভ্যাস হাল আমলের। তবে জিনিসটি মোটেই হাল আমলের নয়। আমেরিকা ইউরোপে প্রায় ১২৫ বছর আগেই তৈরি হয়েছিল এই ধরনের কানে শোনার যন্ত্র। তবে শতাব্দী প্রাচীন যন্ত্রগুলি দেখলে টেথিস্কোপের সঙ্গে সামান্য মিল পেতে পারেন। যদিও পুরোপুরি তেমন ছিল না ১৮৯০ সালে তৈরি প্রথম যুগের  হেডফোনগুলি। 


ইলেক্ট্রফোনের যুগ


তখনও বিশ্বযুদ্ধ দেখেনি পৃথিবী। তখনও অপেরার রমরমা ইউরোপ জুড়ে। আর তার মাঝেই আবিষ্কার করা হয় ইলেক্ট্রোফোন। সংস্থার নামও ছিল ইলেক্ট্রোফোন প্রাইভেট লিমিটেড। অপেরা ও থিয়েটারগুলোতে সেই সময় লাইভ পারফরম্যান্স শোনার জন্য রোজই থিকথিকে ভিড়। থিয়েটারের নায়ক নায়িকাদের আওয়াজ একেবারে দর্শকদের কানের গোড়ায় পৌঁছে দিতে তৈরি হয় ইলেক্ট্রোফোন। এই বিশেষ যন্ত্রের দুরকম‌ দিক ছিল। একটি দিক রিসিভারের মতো মঞ্চ থেকে অভিনেতাদের আওয়াজ তুলে আনত। অন্যদিকে ছিল বেশ কয়েকটি শোনার যন্ত্র। একটি লম্বা লোহার রড সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে একটি লোহার রিং। ঘুরে  পৌঁছে গিয়েছে কান পর্যন্ত। রডটি হাতে ধরে বসে থাকাই নিয়ম। কানে পৌঁছে যাবে অভিনেতাদের কন্ঠস্বর। 


স্টিরিও হেডফোন


ইলেক্ট্রোফোন ইউরোপের বাজারে বেশ কিছু দিন চলেছিল। এর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। এই সময়ই হেডফোনের চেহারায় বদল আনেন ন্যাথানিয়েল ব্যাল্ডউইন। তাঁর আগে টেলিফোনের রিসিভারকে ছোট্ট আকরে তৈরি করেছিলেন আর্নেস্ট মার্কিডিয়ার। সেটি ছিল ওয়ারলেস অর্থাৎ বেতার। এর পর ন্যাথানিয়েল তৈরি করলেন আধুনিক হেডফোন‌। সেই সময় সাধারণ মানুষের থেকে হেডফোনের চল ছিল সেনাবাহিনীর কাজে। আর তাদেরই একটি চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন তার তৈরি নতুন হেডফোন পরখ করে দেখতে। প্রথমে অতটা গুরুত্ব দেয়নি মার্কিন সেনাবাহিনী। পরে দেখা গেল, এ জিনিস যুগান্তকারী আবিষ্কার। সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি। কিন্তু সেই সময় রান্নাঘরে হেডফোন তৈরি করতেন ন্যাথানিয়েল। তাই একবারে দশটার বেশি বানানো সম্ভব হত না। এর জেরেই ব্যবসাটা হাতছাড়া হয় তাঁর ‌। নৌবাহিনী তাঁকে এর স্বত্বের আবেদন করতে পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর বিশ্বাস ছিল, এটা তেমন কোনও বড় আবিষ্কার নয় !


আরও পড়ুন - General Knowledge Story: বিশ্বের বৃহত্তম ইংরেজি শব্দে ২ লক্ষ অক্ষর ! বলুন তো কী ?