ভুবনেশ্বর: সাইক্লোন ডানার দাপট চলেছে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা জুড়ে। সতর্কতা (Cyclone Dana) নেওয়া হয়েছিল আগে থেকেই। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে বেশ কিছু এলাকায়। জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে বহু এলাকা। আর এই ঘূর্ণিঝড় চলার সময়েই নিজের প্রাণের ঝুঁকি (Inspirational Strory) নিয়ে এক আহত রোগীর প্রাণ বাঁচালেন এক সামান্য অ্যাম্বুল্যান্স চালক। নায়কোচিত কাজের মিলল পুরস্কারও। ওড়িশার কেঁদড়াপাড়া জেলার অন্তর্গত কাঠুয়াগণ্ডা নামের একটা ছোট্ট গ্রামেই ঘটেছে এই ঘটনা। অ্যাম্বুলেন্স চালকের নাম মানস কুমার মল্লিক। তিনি ওড়িশার রাজনগরের ১০৮ নং অ্যাম্বুলেন্সের একজন কর্মী তথা চালক। গুরুতর আহত এক রোগীকে তিনিই নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচিয়ে দুরূহ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।
শুক্রবার মানসের কাছে সকাল সাড়ে সাতটার সময় ফোন আসে আর তখনই মানস ও তাঁর দলবল অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তখনও তুঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের দাপট। গাছ উপড়ে পড়ে রাস্তা আটকে যাওয়ায় যে গ্রামে যাওয়ার তাঁর ২ কিমি আগে থেকেই গাড়ি থামিয়ে দিতে হয় তাঁকে। কিন্তু তাতেও দমে যাননি মানস। গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে নিজেই চলে যান সেই রোগীর বাড়ি। রোগীর অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকে। মানস ও তাঁর সহকর্মী নকুল চরণ মল্লিক বুঝতে পেরেছিলেন যে খুব দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার সেই রোগীকে।
কর্দমাক্ত, পিছল রাস্তা পেরিয়ে ভারী বৃষ্টির মধ্যে প্রবল হাওয়ার বেগ সামলে সেই রোগীর বাড়িতে পৌঁছান মানস ও নকুল। সেখানে গিয়ে তারা দেখেন রোগী ইতিশ্রী রাউতের অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক। পড়ে গিয়ে গুরুতরভাবে পিঠে চোট পেয়েছেন তিনি। কোনো অস্বস্তি ছাড়াই মানস তাঁকে দুই হাতে পাঁজাকোলা করে তুলে নেন এবং অ্যাম্বুলেন্সের দিকে নিয়ে চলেন।
শুধু তাই নয়, রাজনগর কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাওয়াটাও খুব একটা সহজ ছিল না। কিন্তু তাতেও একটুও দমে যাননি মানস। তাঁর এই স্বার্থহীন প্রয়াস শুধু যে ইতিশ্রীর জীবন বাঁচাল তাই নয়, বরং বহু মানুষের মনে গর্বের জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। সমাজমাধ্যমে তাঁর এই নায়কোচিত কাজের ভিডিয়ো মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আর তুমুল প্রশংসিত হয় তাঁর এই সাহসিকতা। ওড়িশার উপমুখ্যমন্ত্রী প্রভাতী পরিদার কাছ থেকেও ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, সেই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে গাড়ি পরিস্কার করার সময় তিনি দেখতে পান সেখানে ৬৫০০ টাকা পড়ে আছে, সেই টাকাও একটুও দ্বিধা না করে ফেরত দিতে চলে যান তিনি।
তাঁর বাড়িতেও রয়েছেন একজন ক্যানসারের রোগী, ফলে মানস ঘূর্ণিঝড়ের সময় মানুষের সেবা করার জন্য সাহায্য করার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবায় যোগ দেন। ওড়িশার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুকেশ মেহালিং নিজে মানসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং তাঁর মানবহিতকর কাজের প্রশংসা করেছেন।
আরও পড়ুন; Mobile Games Addiction: বাচ্চাদের মোবাইল গেমসের আসক্তি দূর করবেন কীভাবে?