কলকাতা: 'যা সামনে পায়, তাই মুখে দেয়', বাড়িতে বাচ্চা থাকলে এমন 'অভিযোগ' চেনা। তা বলে দেওয়ালের প্লাস্টার, সোফার ফোমও খাবলে তুলে (Kid Suffers From Pica) খাবে? চমকে উঠবেন না। ব্রিটেনের ওয়েলশের (Britain Kid Put Non Food In Mouth) বাসিন্দা, স্টেসি এ'হিয়ার্নের তিন বছরের মেয়ে ওয়াইন্টার এখন চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই বাড়ির নানা জিনিস মুখে পুরছে। সব সময় উদ্বিগ্ন ও সতর্ক ২৫ বছরের তরুণী স্টেসি। ডাক্তারদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। এবং তাঁদের ধারণা, তিন বছরের খুদে 'Pica' নামে এক ধরনের Eating Disorder-র শিকার।
সমস্যা কোথায়?
বাংলায় 'পাইকা', ইংরেজিতে 'Pica', একটি এমন সমস্যা যেখানে আক্রান্ত খাবার নয়, এমন জিনিসও খেয়ে ফেলতে চায়। এক্ষেত্রে যেমন, ওয়াইন্টার বাড়ির দেওয়াল থেকে প্লাস্টার, সোফা থেকে ফোম, এমনকী, ভাঙা ফটো ফ্রেমের কাচের টুকরোও মুখে পুরে ফেলার চেষ্টা করেছে। বিষয়টি ঠিক কতটা বিপজ্জনক, তা আন্দাজ করা কঠিন নয়। তার উপর, অটিজম রয়েছে তিন বছরের এই খুদের। সব মিলিয়ে মেয়েকে সামলাতে গিয়ে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন স্টেসি। সর্বক্ষণ তটস্থ ভাব। মেয়ের কখন কী খেতে ইচ্ছা করবে আর তখন সে হাতের কাছে যা পাবে, সে চেয়ারের অংশ হোক বা নিজের কম্বল, যে কোনও কিছু মুখে পুরে ফেলবে, এই ভয়ে তার দিকে কড়া নজর রাখতে হয় স্টেসিকে। এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, 'আক্ষরিক অর্থে প্রায় গোটা বাড়িটা ও খেতে চায়। একদম নতুন একটা সোফা কিনেছিলাম। তারও একাংশ খাবলে খেয়ে ফেলেছে।'
ওয়াইন্টারের যতটুকু কথা বলার ক্ষমতা ছিল, ততটুকুও যখন থেকে লোপ পেতে শুরু করে, তখন থেকেই এই সমস্যা দেখা দেয় বলে জানালেন মা। শেষমেশ, গত জানুয়ারিতে, ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। জানা যায়, একযোগে 'পাইকা' এবং 'অটিজম'-এ ভুগছে ওয়াইন্টার। স্টেসির কথায়, 'মুখরোচক কিছু খাবার সাজিয়ে ওয়াইন্টারকে হাই চেয়ারে বসিয়ে দিলে ও সেই সব খাবারের পরিবর্তে চেয়ার খাওয়া বেশি পছন্দ করে। তার উপর অটিজমের ফলে ওর ঘুমও ঠিকঠাক হয় না। মাঝেমধ্যেই জেগে ওঠে।'
'পাইকা' নিয়ে দু-চার কথা...
বিশেষজ্ঞদের মতে, কারও এই সমস্যা থাকলে, খাবার নয় এমন কিছু খেতেই আগ্রহী হয় তারা। তালিকায় ধুলো, কাদা, পাথর, কাগজ, বরফ, রং, চুল, চক, এমনকি মল-ও থাকতে পারে। বিষাক্ত কিছু খেয়ে ফেললে তার পরিণতি মারাত্মক। ফলে এই সমস্যার সঙ্গে একাধিক রোগের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। ঠিক কী কারণে এই সমস্যা হয়, স্পষ্ট নয়। তবে অটিজম বা 'ইন্টেলেকচুয়াল ডিজএবিলিটিজ', ওসিডি, স্কিৎজোফ্রেনিয়ার সঙ্গে বেশি হতে দেখা যায়। আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়। সাধারণত, একটি বয়স পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে এই মুখে পুরে ফেলার অভ্যাস বেশ চেনা। কিন্তু সেই বয়সের পরও এটি চলতে থাকলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি। তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী বাচ্চাটির অভিভাবকদের ওষুধ বা মনোবিদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেবেন।
আরও পড়ুন:যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্তাইনে শিক্ষার আলো দেখাচ্ছে AI Teachers, সৌজন্যে Otermans Institute