কলকাতা: এক চিনা বৃদ্ধা মহিলার থেকে জালিয়াতি করে ৬৬ লক্ষ টাকা লুট করল এক চিনা ইনফ্লুয়েন্সার। দুই বছর আগে সমাজমাধ্যমে তার সঙ্গে আলাপ-পরিচয়। এই বৃদ্ধাকে (Chinese Woman) তিনি নিজের মা বলে ডেকেছিলেন। তার ছেলের মতই আচরণ করতেন প্রথমদিকে। সত্তর বছর বয়স সেই মহিলার, তার পদবি টাং। তিনি বিয়ে (Viral News) করেননি এবং আজীবন নিঃসন্তান থেকেছেন। অনলাইনে আলাপের পরে সেই আগন্তুকের ব্যবহার তাঁকে আকৃষ্ট করে।


সেই চিনা ইনফ্লুয়েন্সারের নাম মাও। দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের সাংক্সি এলাকায় থাকেন তিনি। নিজেকে তিনি সকলের ত্রাতা বলে পরিচয় দেন, মানুষের সমস্যা সমাধান করেই তিনি সমাজমাধ্যমে বিখ্যাত, তিনি যে পণ্য খুব কম বিক্রি হয়, সেই পণ্য বিক্রিতে সহায়তা করেন, এমনকী ঘরছাড়া মানুষকে নিজের ঘরে ফিরিয়ে দিতেও সহায়তা করেন তিনি। টাং নামের সেই মহিলার ভাইঝি জিয়াং হঠাৎ করেই একদিন লক্ষ্য করেন যে তার কাকিমা এই আগন্তুককে প্রায়ই টাকা পাঠান অনলাইনে। ২০২১ সাল থেকেই মাও নামের সেই ব্যক্তির লাইভ স্ট্রিমিং চলাকালীন ছোট ছোট উপহার পাঠাতে শুরু করেন। কিন্তু পরে তাঁকে অবৈধ স্বাস্থ্য পণ্য কিনতে বাধ্য করা হয়।


মাও যেহেতু খুব দ্রুত টাকা বানাবার রাস্তা পেয়েছিল এই মহিলার মাধ্যমে, তাই সে টাং নামের সেই মহিলার ব্যক্তিগত ফোন নম্বর সেভ করে নেয় এবং তাঁকে মা বলে ডাকতে শুরু করে। প্রতিদিনই তার নিজের ছেলের মত মা বলে ডাকতে শুরু করেন মাও। আর কিছুদিন পরেই তার কাছ থেকে টাকা ধার চাইতে শুরু করেন মাও। তার আসল লক্ষ্য যাতে সফল হয়, সেই জন্য মাও টাংয়ের সঙ্গে দেখা করতে ১ হাজার কিমি রাস্তাও পাড়ি দেন। এই ভ্রমণের সময় মাও বহু ভিডিয়ো বানান, আবেগঘন মিউজিক দেন এবং সব ভিডিয়োতে মা ও ছেলের মধ্যেকার পরম শুদ্ধ সম্পর্কের অবতারণা করেন। আর মা ডাক শুনে নিঃসন্তান টাংয়ের মাথা ঘুরে যায়। এমনকী সে তার আত্মীয়দের থেকে টাকা ধার করে মাওকে পাঠাতে শুরু করেন। আত্মীয়রা যখন এই বিষয়ে কথা বলতে শুরু করে, টাং ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার হুমকিও দিয়ে বসে।


টাংয়ের সন্দেহ বাড়তে থাকে যখন দেখা করা যোগাযোগ করা কমাতে শুরু করে মাও। সেই ইনফ্লুয়েন্সার তখন স্পষ্ট জানান যে টাং তাঁকে সন্দেহ করতে শুরু করেছে এবং তিনি যেন তাঁকে আর কখনও ফোন না করেন। আর এই ব্যবহারে আঘাত পেয়েই ২০২৩ সালের শেষ দিকে তিনি কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন।


তদন্ত চলাকালীন জানা যায় টাং নামের সেই বৃদ্ধা মহিলা নিজে একা একটি ঘরে ৪৭,৫৫৫ টাকার মাসিক পেনশনে দিন কাটান আর এদিকে মাওকে পাঠানোর জন্য তিনি অন্যদের থেকে ইতিমধ্যেই ৮.৩২ লক্ষ টাকা ধার করে বসে আছেন। সাংহাইতে পুলিশ মাওকে আটক করতে সফল হয়। টাংয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসার সময় মাও যে গাড়ি নিয়ে এসেছিল তার নম্বর প্লেটের ছবি তুলে রেখেছিলেন টাং আর তা দিয়েই মাওয়ের আসল ছবি বের করে তাঁকে আটক করে পুলিশ। আদালতে এক বৃদ্ধা মহিলাকে লুট করার দায়ে ১০.৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় মাওকে। ১১.৮ লক্ষ টাকার জরিমানা করা হয় তাঁকে।


আরও পড়ুন: Fact Check: ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছিল জয়শঙ্করকে ? জানুন সত্যিটা