গ্বালিয়র: এক পুরুষে দুই স্ত্রী। সতীনে সতীনে আবার বোঝাপড়াও রয়েছে। এক স্বামীকে নিয়েই ঘর করতে রাজি তাঁরা। সংসার এবং বাড়ি যদিও আলাদা। কার কাছে কয়দিন থাকবেন স্বামী, তাও ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। তবে এখানেই শেষ নয়, তিন দিন করে দুই স্ত্রীর কাছে থাকার পর, বাড়তি একদিন যার সঙ্গে ইচ্ছা থাকতে পারেন স্বামী। বাড়তি ওই দিন কার সঙ্গে থাকবেন, তা নিজেই বেছে নিতে পারবেন তিনি।  গল্পকথা মনে হলেও মধ্যপ্রদেশ থেকে এমনই ঘটনা সামনে এল। 


ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষিতে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হলেও, বহুগামী সম্পর্কে অন্য দেশকে টেক্কা দিতে পারে ভারত। মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়রের এই ঘটনা তারই জলজ্যান্ত প্রমাণ। শুধু নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া নয়, আদালতে গিয়ে এক স্বামীকে ভাগ করে নেওয়ার বিষয়টি লেখাপড়া করে নিয়েছেন ওই ত্রয়ী। হিন্দু বিবাহ আইনে অবৈধ হলেও, গ্বালিয়র ফ্যামিলি কোর্ট তাতে আইনি সিলমোহর দিয়েছে বলে দাবি তাঁদের আইনজীবীর।


আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মামলায় স্বামী হলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। কিন্তু অফিসের এক মহিলার সঙ্গে মন দেওয়া-নেওয়া হয় তাঁর। তাতে লকডাউনের সময় প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে চলে আসেন। তার পর গুরুগ্রামের অফিসের সতীর্থকে বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে আইনি বিচ্ছেদ না করেই, দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু শেষ মেশ ওই ব্যক্তির দুই স্ত্রী-ই বোঝাপড়ায় উপনীত হন।


২০১৮ সালে প্রথম বার বিয়ে করেন ওই ব্যক্তি। দু'বছর সংসারও করেছেন। লকডাউনের সময় প্রথম স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেন তিনি। নিজে ফিরে যান কর্মস্থল গুরুগ্রামে। তার পর ২০২০ পর্যন্ত না ফেরায় সন্দেহ দেখা দেয় প্রথম স্ত্রীর মনে। তাতে স্বামীর অফিসে একদিন গিয়ে হাজির হন তিনি। সেখানেই স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানতে পারেন। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী একটি কন্যাসন্তানও হয়েছে বলে জানতে পারেন খবর নিয়ে। 






বিষয়টি জানতে পেরে মাথা ঠিক রাখতে পারেননি ওই মহিলা। অফিসেই ঝামেলা বাধে, লোকজড়ো হয়। তার পর গ্বালিয়র ফ্যামিলি কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাতে ওই ব্যক্তিকে ডেকে পাঠায় আদালত। কিন্তু হাজার বোঝানো সত্ত্বেও ওই ব্যক্তি দ্বিতীয় স্ত্রীকে ছাড়তে রাজি হননি। শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তির দুই স্ত্রীও ত্রিমুখী দাম্পত্য থেকে বেরোতে রাজি হনিন কোনও পরিস্থিতিতেও। 

 

শেষ মেশ, তাঁদের ত্রিমুখী দাম্পত্যে আইনি সিলমোহর দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। তাতে ঠিক হয়, সপ্তাহে তিন দিন করে দুই স্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন ওই ব্যক্তি। বাড়তি রবিবারটি নিজের পছন্দ অনুযায়ী যে কোনও এক স্ত্রীর সঙ্গে কাটাতে পারেন তিনি। দুই স্ত্রীকেই গুরুগ্রামে একটি করে ফ্ল্যাট দিয়েছেন ওই ব্যক্তি।  চাকরি থেকে পাওয়া বেতন থেকেও সমান ভাগ দিতে হবে দুই স্ত্রীকে। 

 

কিন্তু আইনের চোখে কি এই ত্রিমুখী দাম্পত্য বৈধ? জবাব দিতে গিয়ে আইনজীবী হরিশ দিওয়ান বলেন, "পারস্পরিক সম্মতিতে এই চুক্তি হয়েছে। আদালত বা আইনজীবী, কারও কোনও ভূমিকা নেই এর মধ্যে। হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী যদিও এই দাম্পত্য অবৈধ। কারণ হিন্দু বিবাহ আইনে এক স্ত্রী জীবিত থাকলে, তাঁর সঙ্গে আইনি বিচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি নেই। কিন্তু ওঁরা এসবের ধার ধারেননি। "