Merry Christmas 2021: বো-ব্যারাকে বড়দিন, করোনার প্রকোপ কাটিয়ে উৎসবের মরসুম মহল্লায়
চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে, বউবাজার থানার পিছনের গলি দিয়ে খানিক এগোলেই আয়তকার চাতাল। লাল ইটের পাঁজর নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে। যার পরতে পরতে লুকিয়ে ইতিহাস।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appশোনা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আমলে আমেরিকান সৈনদের জন্যই এই ব্যারাকের পত্তন। যুদ্ধের পর খালি ব্যারাকের পুরোটাই দখল করে নেন কলকাতার এক প্রাচীণ জনগোষ্ঠী।
কলকাতার বুকে এ এক অন্য কলকাতা। আয়তকার এই চাতাল আসলে ডিসুজা, ডিরোজিও, ক্রিস্টোফার, অগাস্টিনের মহল্লা। এখানে ৩২টি পরিবারের বসবাস।
ফি বছর এখানে ভিড় করেন শহরের মানুষ। পার্ক স্ট্রিট, সেন্ট পলস, ক্যাথিড্রালেও মতোই এই বো-ব্যারাকও শহুরে বাসিন্দাদের অন্যতম ডেস্টিনেশন বড়দিনের মরসুমে।
২৫ ডিসেম্বরের আগে ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজ, রং-বেরঙের বেলুন আর আলোর রোশনাই-এ সেজেছে এই পাড়া। ঘাড় অবধি ছাঁটা কাঁচাপাকা চুল, পরনে ফুলছাপ গাউন। কেক আর ওয়াইন বিক্রি করতে বেজায় ব্যস্ত বুড়ি মা।
বয়সের ভার বাড়লেও বড়দিনে ব্যারাকজুড়ে উৎসবের মেজাজ। এই মহল্লার জেন ওয়াই-এর বেশিরভাগই আজ কর্মসূত্রে বিদেশে। তবে এই সময়ে শিকড়ের টানে ফিরে আসেন সকলেই। ঘরে ফেরার আনন্দতে ফের আলো ঝলমল করে ওঠে বয়সের ভারে ঝিমিয়ে পড়া বো-ব্যারাক।
বড়দিন আসার আগে থেকেই চলতে থাকে নানা কর্মকাণ্ড। এখানেই নিজের হাতে রেড ওয়াইন তৈরি করা হয়।
এর পর শুরু হয় বিক্রি। পাশাপাশি তালিকায় থাকে মোমো, কেকও। সবমিলিয়ে বড়দিনের এই সময়টা যেন অন্য এক আমেজ বিরাজ করে এই মহল্লায়।
এই মহল্লার ডান দিকে গেলে বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা, বাঁ দিকে আরও এক শতাব্দী প্রাচীন প্রতিষ্ঠান মানেকজি রুস্তমজি পার্সি ধর্মশালা। বিশুদ্ধ পার্সি খাবারের জন্য ভোজন রসিক মানুষরা ভিড় জমান এইখানে।
এটি কোনও সাধারণ রেস্টুরেন্ট নয়। দু-দিন আগে নির্দিষ্ট নম্বরে যোগাযোগ করতে হয়। ওনারা মেনু পাঠিয়ে ওর্ডার নেন। তবে কলকাতার শতাধিক পার্সি ধর্মাবলম্বীদের জন্য রোজই রান্নার আয়োজন করেন কর্তৃপক্ষ।
তবে অভিমানও কম জমেনি এদিকে। এত আলোর মাঝেও যেন জমাট বাঁধা একরাশ অভিমান। ফি বছর কত মানুষ আসেন, ছবি তোলেন ফিরে যান।
কিন্তু অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান তকমা আজও একই রয়ে গিয়েছে। কলকাতাবাসী হওয়া গিয়েছে কি? রাগ হয় না ওদের? হয় বৈকি। মুখে কিছু না বললেও চোখগুলো যেন তেমনই বলে।
এ পাড়ায় আসা অতিথিদের যেন সন্তর্পনেই এড়িয়ে যান ওরা। 'সময় নেই'-এর অজুহাতে মিষ্টি হেসেই ফিরিয়ে দেন। বারবার যেন একই কথা বলতে ভাললাগে না।
ঘোলাটে দৃষ্টি নিয়ে ওপরের বারান্দার বসে থাকেন গ্র্যানি। বো-ব্যারাকের লাল ইটের গা বেয়ে সন্ধে নামে। আর এভাবেই নিয়ম মেনে ২৫ ডিসেম্বর আসে প্রতিবছর।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -