Jagaddhatri Puja: মাথায় ঘোমটা, কপালে সিঁদুর, বছরের বিশেষ দিনে অন্য রূপ এই গ্রামের পুরুষদের

বিশ্বায়নের যুগে লিঙ্গ বৈষম্য ঘোচাতে উঠে আসছে ‘জলবৎ তরলং’ নানা ফিকির। নামী-দামি পুরুষের দল শাড়ি, স্কার্ট পরে নিজেদের অবস্থান বোঝাচ্ছেন লাল গালিচায় হেঁটে।

তবে এ সবের ঢের আগেই হুগলির গ্রামে বহু বছর ধরে নারী-পুরুষের সীমারেখার মধ্যেকার বিভেদ ঘুচিয়ে আসছেন স্থানীয় পুরুষরা।

জগদ্ধাত্রী পুজোয় শুধু শাড়ি পরা নয়, মাথায় ঘোমটা দিয়ে, সিঁদুরে কপাল রাঙিয়ে দেবীর বরণ করে আসছেন তাঁরা।

হুগলি জেলার ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলা বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজোর এমনই রীতি। বহু বছর ধরেই চলে আসছে পুরুষদের হাতে দেবীবরণ।

বহু বছর মানে, কয়েক দশক নয়, প্রায় ২৩০ বছর ধরে এই রীতি চলে আসছে সেখানে। দশমীর দিন তাতে অংশ নিতে উরপচে পড়ে ভিড়।

শোনা যায়, ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটি এলাকায় সেই সময় ইংরেজ শাসকদের একটি ছাউনি ছিল। সেই সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন এলাকার মহিলারা। তাই বাড়ি খুব একটা বার হতেন না তাঁরা।

তখন থেকেই জগদ্ধাত্রী পুজোর যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান সামলে আসছেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা। এমনকি পরিবারের মহিলা সদস্যরা যে ভাবে দেবীবরণ করেন, সে ভাবেই শাড়ি, সিঁদুর পরে দেবীর বরণ করেন তাঁরা। হাতে থাকে পরিপাটি করে গোছানো বরণের ডালাও।

বরণের পালা মিটলে, রীতি মেনে বার হয় শোভাযাত্রাও। প্রতি বছর গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয় দেবীমূর্তিকে। তবে মন্দিরে মধ্যে জনসাধারণের প্রবেশের অনুমতি নেই।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তেঁতুলতলা বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির এই পুজো ২৩০ বছর পুরনো। কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারাম সুর গৌরহাটিতে বসবাস করতেন। তিনি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অনুমতি নিয়ে, দুই বিধবা কন্যার সহায়তায় বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো করেন।

কালের নিয়মে বাড়ির সেই পুজো থমকে যায়। বরং তাঁর বাড়ির জগদ্ধাত্রী চলে আসে তেঁতুলতলা বারোয়ারিতে।

গোরা সৈনিকদের আনাগোনায় নিরাপত্তা অভাব বোধ করতেন সর্বদা। তাই বাড়ি থেকে বার হতেন না তেমন। সেই পরিস্থিতিতে পুরুষদের হাতে পুজোর রীতি গত কয়েকশো বছরেও পাল্টায়নি।