সুপার ডিলাক্স বাসের আদলে অঙ্গনওয়াড়ি স্কুল, শিশুমন বিকাশে অভিনব ব্যবস্থা হুগলিতে
সবুজে মোড়া স্নিগ্ধ গ্ৰাম, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মেঠো পথের লাল মাটির কাঁচা রাস্তা এখন বদলে গিয়েছে কালো পাকা রাস্তায়। বর্ষার জলে ধানেরা সবে মাথা তুলতে শুরু করেছে গ্ৰামজুড়ে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appশহর থেকে অনেক দূরে এমনই একটি মাঠের মাঝে বিশাল একটি সুপার ডিলাক্স বাস যদি এসে দাঁড়ায়, তাহলে অবাক তো হবেই গ্ৰামের সবাই। তেমনি অবাক হয়েছিলেন হুগলির দশঘড়া-২ পঞ্চায়েতের মাদপুর গ্ৰামের মানুষেরা। কাছে এসে জানতে পারেন আদতে বাসটি হল একটি সু-সংহত শিশু বিকাশ কেন্দ্র।
ধনিয়াখালি বল্কের দশঘড়া-২ গ্ৰাম পঞ্চায়েতের মাদপুর ঘোষপাড়ায় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বিগত কয়েক বছর ধরে চলত স্থানীয় এক প্রতিবেশীর জায়গায়। তাতে ১৮-২০ জন ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করত। তার মধ্যে অনেক পড়ুয়াই অনিয়মিত ছিল। পরবর্তীকালে গ্ৰামের সমস্ত ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার আঙিনায় আনার জন্য চিন্তা ভাবনা শুরু করে প্রশাসন। সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই উঠে এসেছিল এমন একটি স্কুল তৈরির পরিকল্পনা।
বাইরে ঝাঁ চকচকে রঙ। সামনে কাঁচের আদল, চারটে চাকা, দুটো দরজা। বাসের সিঁড়ি বেয়ে ভিতরে ঢুকলেই আরও অভিনব ব্যাপার। বর্ণপরিচয় থেকে শুরু করে নানা রঙের ফল, ফুল, কীট -পতঙ্গের ছবি আঁকা বাসের দেওয়ালে।
সিঁড়ির মতো ধাপ করে করে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত অক্ষর আঁকা হয়েছে সঙ্গে ইংরেজি অক্ষর ও লেখা। গোলাকার, অর্ধকার, বক্ররেখা, সরলরেখা, ত্রিভুজের নামসহ ছবি আঁকা হয়েছে শিশুদের সহজভাবে শেখানোর জন্য। বাসের নিচের অংশটি যেখানে বসে বাচ্চারা পড়াশুনা করবে সেটিও খুব সুন্দর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
বর্তমানে সেখানে প্রায় ৪০ পড়ুয়া। আশপাশের গ্ৰাম থেকে স্কুল ছেড়ে এই স্কুলে আসতে মরিয়া অনেকেই। যে বাচ্চারা আগে স্কুলে আসতে কান্নাকাটি করত তারাই এখন স্কুলে যেতে চেয়ে কান্নাকাটি করে।
বাস মডেল স্কুলের জনপ্রিয়তা এতটাই যে দশঘড়া- ২ পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় আহেরী বলেন, 'এলাকার বাইরে আশপাশের ছেলে-মেয়েরা বলছে 'আমরা বাস স্কুলে যাব। অন্য স্কুলে যাব না।' ফলে আশেপাশের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বাচ্চা কমে যাচ্ছে। অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের এই বাস কেন্দ্রটিতে আনার জন্য আবদার করছেন।'
ধনিয়াখালি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন ঘোষ বলেন, 'ধনিয়াখালি বল্কে ৫০০টা আইসিডিএস স্কুল আছে। ছোট থেকেই শিশুদের মন বিকশিত করে তোলার লক্ষ্য সরকারের। তা সত্ত্বেও শিশু বিকাশ কেন্দ্রগুলোতে ভাটা চলছিল। অনেক সময় মা বাচ্চাদের সঙ্গে করে কাজে নিয়ে চলে যান। তারা আর স্কুলে আসে না। তাই বাচ্চাদের লেখাপড়ায় আগ্ৰহ বাড়াতে এই ধরনের মডেল স্কুলের চিন্তা ভাবনা করা হয় প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে। তার পরেই বাসের আদলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়।'
তবে করোনা মহামারি থাবা বসিয়েছে বাচ্চাদের আনন্দে। মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ সমস্ত স্কুলের পঠন-পাঠন। ঘরবন্দী শিশুরা।
মাদপুর গ্ৰামের স্থানীয় গৃহবধূ মহুয়া দাস বলেন, 'বাস স্কুলের ভিতরে পাখি, ফুল , মাছ সব আঁকা আছে এতে বাচ্চারা এসে খুব উৎসাহ পায়। দিদিমণিরা বাচ্চাদের ডাকতেন এই বলে 'আয় বাসে করে দিল্লি বেড়াতে যাব' এতে বাচ্চারা খুব আনন্দ পেত। কিন্তু এখন স্কুল বন্ধ। বাচ্চারা আসতে পারছে না। তাই তাদের মন খারাপ।' (সব ছবি ও তথ্য: সোমনাথ মিত্র, হুগলি)
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -