Narayan Debnath Facts: দুষ্টু ছেলেরাই অনুপ্রেরণা, বাবার সোনার দোকানেই হাতেখড়ি শিল্পী নারায়ণের
বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছিল শরীরে। তাও প্রায় একমাস ধরে চলছিল লড়াই। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। দিন কয়েক আগে হাসপাতালের যে শয্যায় শুয়ে ‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করেছিলেন, সেখান থেকেই বিদায় নিলেন শিল্পী-লেখক নারায়ণ দেবনাথ।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appকিন্তু ‘হাঁদা-ভোঁদা’ ‘নন্টে-ফন্টে’ ‘বাঁটুল: দ্য গ্রেট’-এর মতো মণিমুক্তো যাঁর হাত দিয়ে বেরিয়েছে, বাংলা কার্টুনের স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথকে চিনে নিন আরও ভাল করে।
নারায়ণ দেবনাথের পৈতৃক নিবাস আসলে অভিভক্ত বাংলার মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে। সেখান থেকে হাওড়ার শিবপুরে চলে আসে তাঁর গোটা পরিবার। সেখানেই ১৯২৫ সালে জন্ম শিল্পীর।
আর পাঁচ জনের মতোই ছেলেবেলা কেটেছে নারায়ণবাবুর। আঁকার হাত ভাল ছিল তাঁর। গল্পের বই পড়তে ভালবাসতেন। তা বাবার কাছে কম বকুনি খেতে হয়নি তাঁকে।
হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ‘আবার যখের ধন’ ছিল শিল্পীর ছোটবেলার অন্যতম প্রিয় বই। এ ছাড়াও সৈয়দ মুজতবা সিরাজ, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা পড়তে ভালবাসতেন নারায়ণবাবু।
নারায়ণবাবুর বাবা ছিলেন পেশায় স্বর্ণশিল্পী। তাঁরা কাকা আবার ভাল নকশা করতেন গয়নার। আঁকার টানেই কাকার কাছে গিয়ে বসতেন দোকানে। দোকানে ছোটখাটো কাজে সাহায্যও করতেন।
আঁকার হাত ভাল দেখে তখনই ছেলেকে আর্ট কলেজে ভর্তি করবেন বলে ঠিক করে নেন নারায়ণবাবুর বাবা। তখনও আর্ট কলেজের সরকারিকরণ হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভর্তি হয়ে যান নারায়ণবাবু।
কিন্তু পাঁচ বছর ধরে পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে পারেননি তিনি। চার বছর পরই ছেড়ে দেন কলেজ। সিনেমার ব্যানার, লোগো তৈরির কাজও করেছেন। পরে সাহিত্য কুটিরে কাজ করার সুযোগ পান।
সেখানেই শিশুসাহিত্যের যাবতীয় আঁকার দায়িত্ব এসে পড়ে নারায়ণবাবুর উপর। পঞ্চাশের দশকে ‘হাঁদা-ভোঁদা’ নামে ‘শুকতারা’য় মাঝেমধ্যে একটি কমিকস বেরোত। তাতে একটি বোলতার ছবি থাকত, যা আসলে সে কালের প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুলচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওই ‘হাঁদা-ভোঁদা’কেই ঘষেমেজে ১৯৬২ সাল থেকে নিয়মিত লিখতে শুরু করেন নারায়ণবাবু। এর পর ১৯৬৫ সালে ‘বাঁটুল’ এবং ১৯৬৯ সালে ‘নন্টে-ফন্টে’র আবির্ভাব ঘটে। ছোটবেলায় বাবার সোনার দোকানে পাড়ার ছেলেদের কর্মকাণ্ডই আঁকায় এবং লেখা। ফুটে উঠত বলে পরবর্তীকালে জানিয়েছিলেন নারায়ণবাবু।
সুদীর্ঘ কর্মজীবনে গল্পের বইয়ের অলঙ্করণও করেছেন নারায়ণবাবু। তাঁর অলঙ্করণ করা মনোরঞ্জন ঘোষের ‘পরিবর্তন’ বইটি থেকে পরে হিন্দিতে ‘জাগৃতি’ নামের একটি ছবিও হয়। এছাড়াও ‘সুটকি-মুটকি’, ‘বাহাদুর বেড়াল’, পটলচাঁদ: দ্য ম্যাজিশিয়ান’, ‘পেটুক মাস্টার বটুকলাল’-এর মতো সৃষ্টি বেরিয়েছে তাঁর হাত থেকে।
নিজে ‘টম অ্যান্ড জেরি’ র অনুরাগী ছিলেন নারায়ণবাবু। গল্পের বই পড়তেন। শেষ দিকে, নিজের কাজ নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করতে পছন্দ করতেন না নারায়ণবাবু। একেবারে অসুস্থ হয়ে পড়ার আগে নিজে হাতে হাজারও করতেন। ‘পদ্মশ্রী’ ছাড়াও ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমি’ এবং ‘বঙ্গ বিভূষণ’ সম্মান পেয়েছেন নারায়ণবাবু।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -