The Kerala Story: কোথাও চলছে না 'দ্য কেরালা স্টোরি', কলকাতায় এসে হতাশ আদা শর্মা
এই প্রথমবার কলকাতায় পা রাখলেন অভিনেত্রী আদা শর্মা। এসেছিলেন অনেক আশা নিয়ে। ঘুরে দেখবেন প্রেক্ষাগৃহ, কথা বলবেন দর্শকদের সঙ্গে। কিন্তু এক রাশ হতাশা নিয়ে ফিরতে হল 'দ্য কেরালা স্টোরি'-র মুখ্য চরিত্রকে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appযখন তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের রায় শুনলেন, তখন দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত যখন রায় দিল তাঁর ছবির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার, মুম্বইতে বসে কার্যত লাফিয়ে উঠেছিলেন বাংলার ছেলে। সুদীপ্ত সেন (Sudipta Sen)। 'দ্য কেরালা স্টোরি' (The Kerala Story)-র পরিচালক।
আর তারপরেই, টিকিট কেটে তড়িঘড়ি তিনি ছুটে এসেছিলেন বাংলায়। সঙ্গে এসেছিলেন, ছবির নায়িকা আদা শর্মা (Adah Sharma)। কিন্তু বাংলায় এসে যারপরনাই হতাশ হতে হল পরিচালককে। সাংবাদিক সম্মেলনে, কোনও রাখঢাক না রেখেই, হতাশার কথা, মনখারাপের কথা শোনা গেল পরিচালকের গলায়।
আজ কলকাতায় এসেছিলেন 'দ্য কেরালা স্টোরি'-র পরিচালক সুদীপ্ত সেন ও আদা শর্মা। সাংবাদিক সম্মেলনের প্রথমেই তিনি বলেন, 'আমি বা আদা কেউই রাজনীতিবিদ নই। আমরা রাজনীতি জানি না। রাজনীতির কথা বলতে গেলে হয়তো আমাদের কিছু ভুল হয়ে যাবে, সেটা আমরা করতে চাই না।'
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আলাদা করা যায় না 'দ্য কেরালা স্টোরি' আর রাজনীতিকে। অন্যদিকে, হতাশার কথা লুকোতে পারলেন না পরিচালকও।
সুদীপ্ত বলছেন, 'আমি বাঙালি, এই ছবির মিউজিক ডিরেক্টর বাঙালি, প্রোজাকশন ডিজাইনার বাঙালি.... এত গর্বিত হয়েছিলাম আমরা, যে সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিই, কলকাতায় এসে উদযাপন করব। ঘুরে দেখব প্রেক্ষাগৃহ। কিন্তু কলকাতায় এসে যারপরনাই হতাশ হলাম। নিষেধ উঠিয়ে নেওয়ার পরেও কলকাতার কোনও প্রেক্ষাগৃহেই কেরালা স্টোরি চলছে না। এমনকি বুক মাই শো-তেও টিকিট বুক করা যাচ্ছে না। আমরা অবাক, হতাশ। আমরা এটা ভেবে কলকাতায় আসিনি যে আজও ছবিটা চলবে না কলকাতায়। আশা করছি আমাদের প্রযোজক, আইনজীবী সবাই এই পরিস্থিতির উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। তবে একটা কথা বলতে পারি, যতটা খুশি নিয়ে আমরা আজ কলকাতায় এসেছিলাম, তার সিংহভাগই চলে গেল।'
এদিন সুদীপ্ত আরও বলেন, 'আমি এই ছবিটার কাজ শুরু করেছিলাম ৮ বছর আগে। ঠিক যেমন করে এখন আমাদের কিছু রাজনৈতিক দল ভয় পাচ্ছেন, তেমনভাবেই আমাদের অনেক প্রযোজকেরাও ভয় পেয়েছেন। ছবিটা প্রযোজনা করতে রাজি হচ্ছিলেন না কেউ। শেষে বিপুল শাহ অনেক কষ্টে এই ছবিটা তৈরি করেন। ব্যবসা করতে হলে আমরা কোনও বলিউড মশালা ছবি তৈরি করতাম। ছবি তৈরির সময় জানতাম না আদৌ এই ছবিটা মুক্তি দিতে পারব কি না। জানতাম, ছবিটা ব্যবসা দিতে পারবে না। কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি ছবিটা ভালবাসা পাবে বা ছবিটা নিয়ে এত চর্চা হবে। এখন আর আমরা গুরুত্বপূর্ণ নয়, এখন গুরুত্বপূর্ণ ছবিটা।মানুষকে এই ছবিটা দেখা থেকে আটকানো উচিত নয়।'
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে তুলে ধরা হয়েছিল একটি ভিডিও। সেখানে দেখা হয়েছে এমন কিছু মেয়েদের কথা, শোনানো হয়েছে তাঁদের বার্তা, যারা ধর্মান্তরিত হওয়া ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। এই ছবিতে ৩২ হাজার মেয়ের কথা বলা হয়েছে। তবে এই সংখ্যাটি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। ছবির পরিচালকের কাছে এদিন এই সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি বলেন, 'আমরা ৩২ হাজার মেয়েকে ছবিতে দেখাতে পারব না। কিন্তু তাঁদের মধ্যে থেকেই আমরা কিছুজনের গল্প বেছে নিয়েছি। হতে পারে সংখ্যাটা ৩২ হাজারের চেয়ে কিছু কম। হতে পারে সংখ্যাটা ৩২ হাজারের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই দেশে, যদি একজন মেয়ের সঙ্গেও খারাপ কিছু হয়, তাহলে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাওয়া উচিত গোটা দেশের। আর সেন্সর বোর্ডের কাছে আমরা ২০০ পাতার নথি জমা দিয়েছি, ৩ ঘণ্টার পরীক্ষা দিয়েছি ছবিটা নিয়ে। এত বিতর্কের পরেও সেন্সর বোর্ড ছবি থেকে একটি দৃশ্যও বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেয়নি। এখানেই আমার জয় একজন পরিচালক হিসেবে।'
কলকাতায় আসতে না পারলেও, অনলাইনে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলে প্রযোজক। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার পরেও বাংলায় কোনও শো না থাকায় পরিচালকের মতো হতাশ তিনিও। বিপুল বললেন, 'গতকাল সন্ধে থেকে আজ সকাল পর্যন্ত আমরা ভীষণভাবে অপেক্ষা করছিলাম যে এবার ছবিটা সবাইকে দেখাতে পারব। সুপ্রিম কোর্ট আমাদের যা যা নির্দেশ দিয়েছিল, আমাদের তরফ থেকে সমস্ত কিছু পালন করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের সম্মান আমরা রেখেছি। কিন্তু আমি অবাক হয়ে দেখলাম, কলকাতা তথা বাংলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কেও মানা হচ্ছে না! এটা ভীষণ গুরুতর পরিস্থিতি। যদি এটাই চলে থাকে, আমরা আবার কোর্টে যাব। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট জনসাধারণকে এই ছবিটি দেখার অধিকার দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এও বলেছে, অশান্তির পরিস্থিতি এড়াতে প্রেক্ষাগৃহে নিরাপত্তারক্ষী রাখতে। রাজ্য যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না দিতে পারে, যদি ছবিটি না চলে দেয়, তাহলে সেই পরিস্থিতি গুরুতর। যাঁরা গণতন্ত্রের কথা বলেন আর তারপর এইরকম ব্যবহার করেন একটা ছবির সঙ্গে, তাহলে হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না আমার। তবে এই বিষয়ে যা যা পদক্ষেপ নেওয়ার তা আমরা নেব।'
পরিচালকের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছুক কি না? স্বভাবচিত তৎপরতায় সুদীপ্ত বলেন, 'আমি গত ৫-৬দিন ধরে সমস্ত জায়গায় বলেছি, আমি মুখ্যমন্ত্রীকে ভীষণ সম্মান করি। ওঁর কাছে আমাদের একটাই প্রার্থনা, আপনি একবার ছবিটা দেখুন। উনি যদি চান, আমি ওঁর সঙ্গে বসে ছবিটা দেখব। এই ছবিটা আমার ইগোর বিষয় নয়। আমরা কিছু মেয়েদের কথা, তাদের ঘটনার কথা ছবিতে তুলে ধরেছি। আর সেই ঘটনাগুলো খুব বড়। যে মেয়েরা কেরালা থেকে এসেছেন, ব্যাঙ্গালোর থেকে এসেছেন, তাঁরা মমতাদিদির সমর্থন চান। মেনে নিলাম ৩২ হাজার একটা কাল্পনিক নম্বর। কিন্তু এই বিষয়টাকে তো কেউ অস্বীকার করছেন না। আমার ধারণা বিষয়টি নিয়ে দিদির ওইসব মেয়েদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।'
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -