Devika Rani: রক্ষণশীলতার বেড়াজাল ভেঙেছেন প্রতি পদে, ভারতীয় চলচ্চিত্রের ‘ফার্স্ট লেডি’ দেবিকা রানি
শুধু অভিনেত্রী বললে যথোপযুক্ত বিচার হয় না তাঁর কৃতিত্বের ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের ‘ফার্স্ট লেডি’, ‘যুগান্তকারী’র মতো উপমা ব্যবহারেও ইতস্তত বোধ হয়। অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত হলেও, দেবিকা রানি সঠিক অর্থেই ছিলেন পথপ্রদর্শক। -ফাইল চিত্র।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appপেশাগত জীবনে হোক বা ব্যক্তিগত, সমাজ-সংসারের বেড়াজাল ভেঙেছেন প্রতি পদে। নিজের মর্জির মালকিন ছিলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। তাই এত বছর পরও বার বার তাঁর উল্লেখ উঠে আসে। ছবি: The International Roerich Memorial Trust.
প্রবাসী বাঙালি পরিবারে জন্ম দেবিকা রানির। পিতামহ ছিলেন পাবনার জমিদার। বাবা মাদ্রাজের প্রথম ভারতীয় শল্য চিকিৎসক। ঠাকুমা সুকুমারী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বোন। মা লীলাদেবী চৌধুরী ছিলেন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ভাইঝি। -ফাইল চিত্র।
ছোটবেলায় ইংল্যান্ডের বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা দেবিকা রানির। তার পর লন্ডনে রয়্যাল অ্যাকাডেমি অফ ড্রামাটিক আর্ট এবং রয়্যাল অ্যাকাডেমি অফ মিউজিকে ভর্তি হন। আর্কিটেকচার, টেক্সটাইল ডিজাইনের কোর্সও করেন।এলিজাবেথ আর্ডেনের অধীনে শিক্ষানবীশও ছিলেন।ছোটবেলায় ইংল্যান্ডের বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা দেবিকা রানির। তার পর লন্ডনে রয়্যাল অ্যাকাডেমি অফ ড্রামাটিক আর্ট এবং রয়্যাল অ্যাকাডেমি অফ মিউজিকে ভর্তি হন। আর্কিটেকচার, টেক্সটাইল ডিজাইনের কোর্সও করেন।এলিজাবেথ আর্ডেনের অধীনে শিক্ষানবীশও ছিলেন। -ফাইল চিত্র।
১৯২৮ সালে হিমাংশু রাইয়ের সঙ্গে আলাপ দেবিকা রানির। পেশায় ব্যারিস্টার হিমাংশু চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। কস্টিউম এবং আর্ট ডিরেকশন বিভাগে হিমাংশুর সহযোগী লহিসেবে বিনোদনের জগতে পা রাখেন দেবিকা রানি। জার্মানি গিয়ে সেই সংক্রান্ত শিক্ষাও লাভ করেন হাতেকলমে। অভিনয়ও শেখা সেই সময়ই। ছবি: The International Roerich Memorial Trust.
প্রথম হিমাশুর সঙ্গেই একটি নাটকে অভিনয় করেন দেবিকা রানি। বিদেশে নাটকটি প্রশংসিত হয়। ১৯২৯ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দু’জনে। মুম্বইয়ের ‘বম্বে টকিজে’র প্রতিষ্ঠাতা দেবিকা রানি এবং হিমাংশুই। পশ্চিমি ঘরানাকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়াই লক্ষ্য ছিল তাঁদের। এই ‘বম্বে টকিজ’ থেকেই দিলীপ কুমার, অশোক কুমার, মধুবালার মতো তারকার জন্ম হয়। -ফাইল চিত্র।
শুধুমাত্র বড়পর্দায় তাঁর অবদানের জন্যই নয়, আত্মবিশ্বাস, ব্যক্তিত্বগুণের জন্যও দেবিকা রানিকে ‘ফার্স্ট লেডি অফ ইন্ডিয়ান সিনেমা’ বলা হতো।‘কর্ম’ ছবিতে দেবিকা রানি এবং হিমাশুর চার মিনিট দীর্ঘ চুম্বন দৃশ্য ঘিরে তোলপাড় পড়ে যায়। -ফাইল চিত্র।
‘জওয়ানি কি হাওয়া’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে নজম-উল-হাসানের সঙ্গে পরিচয়। পরবর্তী কালে, ‘জীবন নাইয়া’ ছবিতে কাজ করার সময় ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তাঁদের। স্বামীকে ছেড়ে নজমের সঙ্গে পালিয়েও যান দেবিকা রানি। ভারতীয় সমাজে তখনও বিবাহবিচ্ছেদ ঘিরে ছুঁৎমার্গ ছিল। পরে আবার হিমাশুর কাছেই ফিরে আসেন দেবিকা রানি। নজমকে বাদ দিয়ে ‘জীবন নাইয়া’ ছবিতে নেওয়া হয় অশোক কুমারকে। -ফাইল চিত্র।
এর পরও অশোক কুমারের সঙ্গে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন দেবিকা রানি। ‘জীবন প্রভাত’, ‘ইজ্জত’, ‘বচন’, ‘দুর্গা’র মতে একের পর এক হিট ছবি উপহার দেন। তবে তাঁদের অভিনীত ‘অচ্ছুত কন্যা’ সাড়া ফেলে দেয় সর্বত্র। ভারতের জাতপাতের বিভাজন নিয়ে তৈরি হয় ছবিটি। -ফাইল চিত্র।
অভিনয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে গেলেও, ব্যক্তিগত জীবনে ঝরঝাপটা থামেনি দেবিকা রানির। হিমাংশুর সঙ্গে কাজ করলেও, টাকাপয়সা আলাদা করে নেন দু’জনেই। তার মধ্যেই হিমাংশুর শরীর ভেঙে পড়ে। ১৯৪০ সালে মারা যান তিনি। এর পর ‘বম্বে টকিজে’র অংশীদারিত্ব নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। সংস্থার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন দেবিকা রানি। ‘অনজান’, ‘বসন্ত’, ‘কিসমতে’র মতো ছবি প্রযোজনা করেন তিনি। মূলত সামাজিক বিষয়বস্তুকে বেছে নেন। ছবি: The International Roerich Memorial Trust.
১৯৪৪ সালে ‘জোয়ার ভাঁটা’ ছবিতে ইউসুফ খানকে পছন্দ হয় দেবিকা রানির। কিন্তু নামটি পছন্দ না হওয়ায় অভিনেতার নাম দিলীপ কুমার রাখেন তিনি। শিশুশিল্পী হিসেবে মুমতাজকেও সুযোগ করে দেন। ‘বম্বে টকিজে’র হাত ধরে অভিনয়ে আসা রাজ কপূরেরও। দেবিকার রানির হাতেই ভারতীয় চলচ্চিত্র নয়া উচ্চতায় পৌঁছয়। শেষ বার, ১৯৪৩ সালে ‘হমারি বাত’ ছবিতে অভিনয় করেন দেবিকা রানি। এর পর অবসরগ্রহণ করেন। ‘বম্বে টকিজে’ নিজের শেয়ার বিক্রি করে দেন। দাদাসাহেব ফালকে, পদ্মশ্রী-সহ বিনোদন জগতে অবদানের জন্য অজস্র সম্মান পেয়েছেন দেবিকা রানি। -ফাইল চিত্র।
১৯৪৪ সালে একটি ছবির সেটের নকশার কাজে রুশ চিত্রকর নিকোলাস ররিচের ছেলে সোভেতোস্লাভের সঙ্গে সাক্ষাৎ দেবিকা রানির। তার পর থেকে সোভেতোস্লাভের একাধিক সৃষ্টির বিষয় হয়ে ওঠেন দেবিকা রানি। দেবিকার উদ্দেশে নিজের সমস্ত সৃষ্টি উৎসর্গ করে দেন সোভেতোস্লাভ। ১৯৪৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তাঁরা। হিমাচল প্রদেশের মানালিতে ঘর বাঁধেন তাঁরা। সেখানে বন্যপ্রাণী নিয়ে কিছু তথ্যচিত্রও তৈরি করেন দেবিকা রানি।এর পর বেঙ্গালুরুতে সরে যান তাঁরা। ছবি: The International Roerich Memorial Trust.
১৯৯৪ সালে মারা যান দেবিকা রানি। তার এক বছর আগেই মৃত্যু হয় সোভেতোস্লাভের। দেবিকা সারাজীবন নিঃসন্তান ছিলেন। আদালতের নির্দেশে কর্নাটক সরকার তাঁদের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে। ছবি: The International Roerich Memorial Trust.
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -