Heartbreak: মন ভাঙলে কেন শূল বেঁধে বুকে! রহস্যভেদ বিজ্ঞানের
জীবন মানেই ওঠাপড়া। তারই অঙ্গ ভাললাগা, ভালবাসা, এমনকি মন ভাঙাও। কিন্তু সব যন্ত্রণার উপশম থাকলেও, ভাঙা মন জোড়ো লাগানোর পথ্য কিনতে পাওয়া যায় না বাজারে। বিশেষ কারও চলে যাওয়া কেন মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে, অন্য কোনও যন্ত্রণা কেন তার সামনে লঘু বলে বোধ হয়, যুগ যুগ ধরে সেই প্রশ্ন তাড়িয়ে বেড়িয়েছে মানুষকে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appকিন্তু মন ভাঙলে কেন ভেঙেচুরে যান মানুষ, তার প্রভাব রোজকার জীবনে তো পড়ে, কেন শরীরকেও কাবু ফেলে, তার উত্তরও খুঁজে বার করে ফেলেছে বিজ্ঞান, যার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে হরমোনও।
কাউকে ভাললাগা, কারও প্রতি ভালবাসার অনুভূতি আমাদের প্রাণচঞ্চল করে তোলে। অজান্তেই উচ্ছ্বাসে ভেসে যাই আমরা। যখন সেই অনুভূতির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়, নেতিবাচক চিন্তা ভিড় করে মনে, তাতে মানসিক ভাবে তো বটেই, শারীরিক ভাবেও যন্ত্রণায় বিদ্ধ হই আমরা।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নেতিবাচক আবেগ আসলে হরমোন দ্বারা প্রভাবিত। শরীরে কর্টিসোল, অ্যাড্রেনালাইন এবং নরঅ্যাট্রেনালাইনের মতো পীড়া সৃষ্টিকারী হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। সেই তুলনায় হ্রাস পায় সেরোটোনিন, অক্সিটোসিনের মতো মনকে চনমনে রাখতে সাহায্যকারী হরমোনের মাত্রা। তাতে মনের পাশাপাশি প্রভাব পড়ে শরীরেও।
মনভাঙার অভিজ্ঞতা কেন যন্ত্রণাদায়ক, তার সপক্ষেও বৈজ্ঞানিক যুক্তি রয়েছে। গবেষকদের মতে, প্রেমে পড়লে স্বাভাবিক ভাবেই হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। এর মধ্যে থাকে ‘কাডল’ হরমেন অক্সিটোসিন, মন ভাল রাখার হরমোন ডোপামাইন।কিন্তু মন ভাঙলে অক্সিটোসিন এবং ডোপামাইনের মাত্রা হ্রাস পায়। সেই তুলনায় বৃদ্ধি পায় কর্টিসোলের মতো হরমোনের মাত্রা, যা পীড়ার জন্য দায়ী।কর্টিসোল নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি, উৎকণ্ঠা এমনকি ব্রণর সমস্যাও দেখা দেয়।
সম্পর্কের সুতো ছেড়ে যাওয়া একরকম সামাজিক প্রত্যাখানও বটে, এ ক্ষেত্রে প্রিয়জন মুখ ফিরিয়ে নেন। বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস-এ ২০১১ সালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, এর ফলে শারীরিক যন্ত্রণার সঙ্গে সংযুক্ত মস্তিষ্কের বিশেষ জায়গাগুলিও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে বুকে ব্যথা অনুভব করেন কেউ কেউ। আবার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়া, ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়ার অনুভূতিও সৃষ্টি হয়। তাই গবেষকদের মতে, শারীরিক যন্ত্রণার মতো মনভাঙাও স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সিমিপ্যাথেটিক এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র সাধারণত পরস্পরের পরিপূরক। প্রথমটি শরীরকে যুঝতে সাহায্য করে, হৃদস্পন্দন এবং শ্বাসক্রিয়া বাড়িয়ে তোলে। আবার দ্বিতীয়টি শরীরকে শান্ত রাখে। কিন্তু মন ভাঙলে দু’টিই সক্রিয় হয়ে ওঠে বলে মত অনেকের।
সে ক্ষেত্রে, এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়া মস্তিষ্ক এবং হৃদযন্ত্র, দু’ই-ই ধন্দে পড়ে যায়। ফলে হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপে প্রভাব পড়ে, কমে আসে হৃদস্পন্দন। এর সপক্ষে, প্রমাণস্বরূপ সাইকোনিউরোএন্ডোক্রিনোলজি-তে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের উল্লেখ করা যায়। তাতে দেখা গিয়েছে, স্বামী বা স্ত্রী মারা যাওয়ার ছ’মাসের মধ্যে তাঁদের সঙ্গীর জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায় একধাক্কায় ৪১ শতাংশ।
তাই যে সমস্ত মানুষের হৃদস্পন্দন শ্লথ, তাঁদের মধ্যে ক্লান্তি, উৎকণ্ঠা, অবসাদ, অনিদ্রা এবং হৃদস্পন্দনের ওঠাপড়ার সমস্যা দেখা দেয়। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকায়াট্রি গবেষণাপত্রে এমন দাবি করা হয়।
মন ভাঙা অনেক সময় গুরুতর অসুখের আকারও ধারণ করতে পারে। চিকিৎসার ভাষায় এই রোগকে বলা হয় তোকোৎসুবো কার্ডিওমায়োপ্যাথি অথবা ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম। দুশ্চিন্তা, গভীর আবেগ এবং শারীরিক অসুস্থতা থেকে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর ফলে সাময়িক ভাবে হৃদস্পন্দননের গতি পরিবর্তন হতে পারে। আবার ধুকপুকুনি বেড়েও যেত পারে অসম্ভব রকম। তা থেকেই বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। গবেষকদের একাংশের মতে, মন ভাঙার যন্ত্রণা চুরমার করে দিতে পারে মানুষকে। আবার কঠিন দুনিয়ার সঙ্গে দাঁতে দাঁতে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণাও জোগায়।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -