Pakistan Banyan Tree: স্পর্ধা দেখে মেজাজ ঠিক রাখতে পারেননি গোরা সাহেব, সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন, ১২৫ বছর ধরে পাকিস্তানে বন্দি এই বটগাছ
ঔপনিবেশিক শাসনের ক্ষত আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভারত। শুধু ভারতই নয়, একই ক্ষত বুকে নিয়ে বেঁচে রয়েছে পড়শি দেশ পাকিস্তানও। দুই দেশের মানুষজনই শুধু নয়, প্রকৃতির বুকেও জ্বলজ্বল করছে আঘাতের চিহ্ন।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appপাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে সেই ভয়াবহ সময়ের প্রতীক হিসেবে বেঁচে রয়েছে একটি বট গাছ। লোহার শিকলে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা পড়ে রয়েছে বটগাছটি। নেশার ঘোরে এক ইংরেজের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিল গাছটি। তাই গ্রেফতার করা হয় তাকে, হাতে পায়ে পরানো হয় শিকল। আজও সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বটগাছটি।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমের খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে, তোরখাম সীমান্তের কাছে অবস্থিত ছোট্ট শহর লান্দি কোটাল। সেখানেই শিকল পরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বটগাছটি। সেটি এলাকার মানুষের কাছে ঔপনিবেশিক শোষণের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
নয় নয় করে ১২৫ বছর আগের ঘটনা। ভারত তখনও অখণ্ড। ১৮৯৮ সালে লান্দি কোটালের শাসক ছিলেন ইংরেজ আধিকারিক জেমস স্কুইড। লান্দি কোটালের যে এলাকায় অবস্থিত বটগাছটি, সেটি এখন সেনা ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে পরিচিত।
শোনা যায়, এক দিন একটু বেশিই সুরা পান করেছিলেন জেমস। নেশার ঘোরে প্রায় দাঁড়াতেই পারছিলেন না। চোখের সামনে দুলছিল চারিদিক। সেই সময় আচমকাই তাঁর মনে হয়, বটগাছটি যেন তাঁর দিকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে।
শিকড় ছাড়িয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা বটগাছের এহেন স্পর্ধা সহ্য করেত পারেননি জেমস। তাই গাছটিকে গ্রেফতার করার নির্দেস দেন তিনি। গাছটিকে অপরাধী ঘোষণা করা হয়। হাতে-পায়ে পরানো হয় লোহার শিকল, যাতে আর তাঁর দিকে এগনোর সাহস না পায় গাছটি।
দেশভাগের মাধ্যমে ইংরেজ শাসনের সমাপ্তি ঘটেছে। কাঁটাতার দিয়ে বিচ্ছিন্ন দুই পৃথক দেশে পরিণত হয়েছে ভারত এবং পাকিস্তান। তার পর ৭৫ বছর কেটে গলেও, আজও লান্দি কোটালে শিকলে বাঁধা অবস্থাতেই বিরাজ করছে বটগাছটি। সেটিকে দেখতে ভিড় করেন মানুষজন।
বটগাছের উপর ইংরেজ সাহেবের এই গোঁসার আখ্যান পাকিস্তানে সর্বজনবিদিত। স্থানীয়দের মতে, বটগাছের পায়ে বেড়ি পরিয়ে আসলে সাধারণ মানুষকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন ইংরেজ সাহেব জেমস। একটু এদিক ওদিক হলে, তাঁদের সঙ্গেও এমন ঘটতে পারে, এই বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
ঔপিবেশিক শাসন এবং শোষণের ভয়াবহ ইতিহাস যাতে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে না যায়, তার জন্যই গাছটিকে আজও সেই অবস্থাতেই রেখে দেওয়া হয়েছে। সকলে যাতে সেই ভয়াবহ ইতিহাস জানতে পারেন, তার জন্য ১২৫ বছর আগের ঘটনার বিবরণও দিয়েছে। গাছে ঝোলানো বোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘আমি গ্রেফতার হয়েছি। এক সন্ধেয় নেশার ঘোরে একজন ইংরেজ সাহেবের মনে হয়, আমি আসল জায়গা ছেড়ে তাঁর দিকে এগোচ্ছি। তাই আমাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। সেই থেকে গ্রেফতার হয়ে রয়েছি’।
দেশভাগের পর লান্দি কোটাল এলাকায় মূলত আফ্রিদি উপজাতিদের বসবাস গড়ে ওঠে। ওই বটগাছটি সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা, যাতে পরবর্তী প্রজন্মও ইতিহাস জানতে পারে, বুঝতে পারে ঔপনিবেশিক শোষণের ভয়াবহতা।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -