Independence Day 2024: নবজন্ম লাভ করেছিল ভারত, স্বাধীনতাপ্রাপ্তিতে মধ্যরাতের ভাষণে যা বলেছিলেন নেহরু...
দেশভাগের ক্ষত, শরণার্থী সঙ্কট এবং সর্বোপরি ভবিষ্যত ঘিরে অনিশ্চয়তার আবহ, স্বাধীনতা প্রাপ্তির মুহূর্তে উদ্বেগের কারণ ছিল হাজারো। সেই আবহেও ভারতবাসীর হৃদয়ে স্বপ্নপূরণের আবেগ জাগিয়ে তুলেছিলেন জওহর লাল নেহরু।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In App১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট মধ্যরাতে সংবিধান সভা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন নেহরু। আজও সেই ভাষণ শুনলে শিহরণ জাগে। ওই রাতেই সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব কাঁধে উঠেছিল তাঁর।
তাই নেহরুর শাসনকাল নিয়ে বিস্তর কাটাছেঁড়া হলেও, মধ্যরাতের ওই ভাষণ এবং তাকে ঘিরে ভারতবাসীর যে আবেগ, তাকে উপেক্ষা করতে পারেন না কেউ। ওই রাতে নিয়তির সঙ্গে অভিসারের কথা বলেছিলেন নেহরু, যা আজও অন্যতম জনপ্রিয় ভাষণ হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে ইতিহাসে।
নেহরু ভাষণে বলেন, দীর্ঘকাল আগে নিয়তির সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলাম আমরা এবং আজ প্রতিশ্রুতি রক্ষার সময় এসে উপস্থিত হয়েছে, সম্পূর্ণ ভাবে, ষোলো আনা না হলেও, বহুলাংশে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে। মধ্যরাতের ঘণ্টা যখন বাজবে, গোটা পৃথিবী যখন নিদ্রাভারাতুর, ভারত জীবন এবং স্বাধীনতার চেতনায় জেগে উঠবে।
নেহরু বলেন, ইতিহাসে কদাচই এমন দুর্লভ মুহূর্ত আসে, যখন পুরাতনকে পিছনে ফেলে নতুনের পথে এগোই আমরা, একটি যুগের সমাপ্তি ঘটে, বহুকাল ধরে অবদমিত থাকা জাতিসত্তাব বাগ্ময় হয়ে ওঠে। এই সন্ধিক্ষণে দেশের সেবায়, দেশের মানুষের সেবায় মানবিকতার বৃহত্তর স্বার্থে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে আমাদের
ইতিহাসের কোনও এক আদিম প্রত্যুষে অন্তহীন অনুসন্ধানের পথে যাত্রা শুরু করেছিল ভারত। বহু শতাব্দীর গর্ভে ভারতের সেই অশেষ সংগ্রাম, সাফল্য এবং ব্যর্থতা নিহিত রয়েছে। সৌভাগ্য হোক বা দুর্ভাগ্য, লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি ভারত, যে আদর্শ তাকে শক্তি জোগায়, তা বিস্মৃত হয়নি। আজ এই লগ্নে দুর্ভাগ্যপূর্ণ যুগের অবসান ঘটিয়ে পুনরায় আত্ম-আবিষ্কারে ব্রতী হই আমরা।
আজ যে সাফল্য উদযাপন করছি আমরা, তা বৃহত্তর জয়ের পথে সোপানমাত্র, আরও অনেক সাফল্য এবং কৃতিত্ব অপেক্ষা করছে আমাদের সামনে। সেই যাবতীয় সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার এবং যাবতীয় প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়ার মতো নির্ভীক এবং বিচক্ষণ হতে পেরেছি কি আমরা?
স্বাধীনতা এবং ক্ষমতার সঙ্গে দায়িত্বও কাঁধে এসে বর্তায়। এই সংবিধান সভা, এই সার্বভৌম গণ পরিষদের উপরই সেই দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। স্বাধীনতার জন্মলগ্নের পূর্বে অসহ যন্ত্রণা সহ্য করেছি আমরা, সেই স্মৃতিতে ভারাক্রান্ত আমাদের হৃদয়। এখনও সেই যন্ত্রণার রেশ রয়েছে। অতীত অতিক্রান্ত হয়েছে, ভবিষ্যতের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি।
ভবিষ্যতের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয় মোটেই। বিশ্রাম মিলবে না, বরং নিরলস পরিশ্রম করতে হবে। এযাবৎ যে অঙ্গীকার করেছি এবং আজ যে অঙ্গীকার করব, তা পূরণ করতে হবে। ভারতের সেবা করার অর্থ লক্ষ লক্ষ যাতনাক্লিষ্টের সেবা। দারিদ্র, অজ্ঞতা, ব্যাধি এবং বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে।
আমাদের প্রজন্মের মহাত্মার লক্ষ্য প্রত্যেকের অশ্রু মোছা। এই কাজ দুঃসাধ্য হতে পারে, কিন্তু যতদিন মানুষ এক বিন্দুও চোখের জল ফেলবেন, যতদিন যাতনা সইবেন, ততদিন পর্যন্ত নিরলস পরিশ্রম করে যেতে হবে আমাদের। যে স্বপ্ন দেখেছি আমরা, তার বাস্তবায়ন ঘটাতে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে, যে স্বপ্ন আমরা ভারতের জন্য দেখেছি, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সচেষ্ট হব আমরা।
নেহরু আরও বলেন, শান্তি যেমন অবিভাজ্য, স্বাধীনতা, সমৃদ্ধিও তাই। একটি মাত্র পৃথিবীর টুকরো টুকরো বিভাজন কাম্য নয়। ভারতবাসীর কাছে আনাদের আবেদন, মনে আস্থা এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে এই দুঃসাহসী অভিযানে আমাদের সঙ্গী হোন। এটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ে সর্বনাশী সমালোচনা, শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে চলা এবং পরস্পরকে দোষারোপ করার সময় নয় এটা। এমন এক স্বাধীন ভারতের নির্মাণ চাই, যেখানে ভারতমাতার সব সন্তান মিলেমিশে থাকতে পারবেন।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -