Roman Emperor Nero: রোম যখন পুড়ছিল, বেহালা বাজাচ্ছিলেন সম্রাট নিরো? আসল সত্য কী
সাজানো গোছানো রোম সাম্রাজ্য যখন পুড়ে ছাই হচ্ছিল, সম্রাট নিরো সেই সময় বেহালা বাজাতে মগ্ন ছিলেন বলে কথিত রয়েছে। অত্যাচারী শাসকের চরিত্র বোঝাতে আজও এই উপমা ব্যবহৃত হয়। কিন্তু রোম যখন পুড়ছিল, সত্যিই কি বেহালা বাজাতে মত্ত ছিলেন নিরো?
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appঅতীতের ঘটনাবলীর রেকর্ডই ইতিহাস হিসেবে গন্য হয়। সোজাসাপটা ইতিহাস পছন্দ না হলে, চর্চা, গুঞ্জনকে সেই ইতিহাসের সঙ্গে মিশিয়ে দেন কেউ কেউ। লোকমুখে সেই বিকৃত ইতিহাসই চাউর হতে থাকে, যা যাচাই করাও সম্ভব হয় না সকলের পক্ষে।
ব্যক্তিগত ভাবনা, গুঞ্জন ইতিহাসের সঙ্গে মিশে গিয়ে নিরোকেও তেমনই রোমের কুখ্যাত সম্রাটে পরিণত করেছে। কিন্তু যা কিছু রটে, তার সবটুকু সবসময় সত্যও হয় না। নিরোর ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য বলে মত ইতিহাসবিদদের একাংশের।
৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর জন্ম নিরোর। রোমের পঞ্চম সম্রাট ছিলেন তিনি। নিরোর যখন ২ বছর বয়স, তাঁর মা আগ্রিপিনা দ্য ইয়াঙ্গারকে নির্বাসনে পাঠান সম্রাট কালিগিউলা। তিন বছর বয়সে নিরোর বাবা মারা গেলে আত্মীয়ার দেখভালে বেড়ে ওঠেন নিরো।
৪১ খ্রিস্টাব্দে কালিগিউলা খুন হলে, ক্লদিয়াস সিংহাসনে বসেন। আবারও মায়ের সঙ্গে মিল হয় নিরোর। আগ্রিপিনা ক্লদিয়াসকে বিয়ে করেন। আপন সন্তানকে বাদ দিয়ে নিরোকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার ঘোষণা করেন ক্লদিয়াস। ৫৪ খ্রিস্টাব্দে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে সিংহাসনে উপবীষ্ট হন নিরো। তাঁর শাসনকাল যদিও স্বল্পকালই স্থায়ী হয়েছিল। ৬৮ খ্রিস্টাব্দে, মাত্র ৩০ বছর বয়সে আত্মঘাতী হন নিরো।
নিরোর মা আগ্রিপিনা এবং নিজের দুই স্ত্রীকে হত্যা করেন, শুধুমাত্র গানবাজনা, শিল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, রাজপাটের দিকে চোখও দিতেন না বলে যা শোনা যায়, তা নিন্দুকদের হাতে রচিত বলে মত ইতিহাসবিদদের একাংশের। প্রত্নতত্ত্ববিদ ফ্রাঞ্চেসকা বোলোনা এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার প্রফেসর এমিরেটাস হারল্ড ড্রেকের মতে, গোটা পৃথিবীর সামনে নিরোকে খলনায়ক হিসেবে তুলে ধরেন তাঁর বিরোধীরা।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, ৬৪ খ্রিস্টাব্দে আন্তিয়ামে (অধুনা ইতালির আঞ্জিও) ছুটি কাটাচ্ছিলেন নিরো। সেখানেই রোমে আগুন লেগেছে বলে জানতে পারেন। সেই বিধ্বংসী আগুনে রোমের ১৪টি জেলার মধ্যে ১০টি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ান।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই রোমে ফিরে যান নিরো। জরুরি ভিত্তিতে গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন, খাবার, পানীয়, ত্রাণসামগ্রী সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ড্রেক জানিয়েছেন, এমনকি নিজের প্রাসাদের দরজাও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খুলে দেন নিরো। তাঁর বাগানে তাঁবু খাটিয়ে আশ্রয় নেন অনেকেই।
আগুন লাগার সময় যেহেতু রোমে উপস্থিত ছিলেন না নিরো এবং সঙ্গীতের প্রতি যেহেতু আসক্তি ছিল তাঁর, তাই 'রোম যখন জ্বলছে, নিরো বেহালা বাজাচ্ছিলেন' এই বুলি ছড়িয়ে পড়ে। আসলে নিরোকে খলনায়কে পরিণত করতেই এই বাক্যের ব্যবহার শুরু বলে মত ড্রেকের।
ড্রেক জানিয়েছেন, আসলে সঙ্গীতের অনুরাগী ছিলেন নিরো। সুখ-দুঃখ, সবেতেই সঙ্গীতের মধ্যে আশ্রয় খুঁজতেন। হাজার চেষ্টা করেও যখন আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি, একেবারে ভেঙে পড়েন নিরো। গ্রিসের ট্রয়ের সঙ্গে রোমের দুর্দশার তুলনা করেন তিনি। নতুন করে রোমকে গড়ে তুলবেন কী করে, সেই চিন্তায় বিহ্বল হয়ে পড়েন। সেই সময় সঙ্গীতের মধ্যেই সান্ত্বনা খুঁজেছিলেন, যা পরবর্তীতে তাঁকে খাটো করার অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায়।
শুধু তাই নয়, ইতিহাসবিদদের মতে, রোম যখন আগুনে পুড়ছিল, সেই সময় বেহালার আবিষ্কারও হয়নি। তারও প্রায় ১০০০ বছর পর বেহালার আবির্ভাব ঘটে। হতে পারে অন্য কোনও গ্রিক বাদ্যযন্ত্র কিথারা বাজিয়ে শোক ভোলার চেষ্টা করছিলন তিনি। দুঃখের সময় সঙ্গীতের মধ্যে আশ্রয় খোঁজার এমন নিদর্শন ইতিহাসে ভূরি ভূরি রয়েছে।
ড্রেক জানিয়েছেন, রোম পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেন নিরো, যাতে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আবারও নির্মাণ খাড়া করা সম্ভব হয়। কাঠের পরিবর্তে পাথরের বাড়ি তৈরির নিদান দেন তিনি। রাস্তাঘাট আরও চওড়া করেন। শহরের গলিতে গলিতে জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন নিরো। তাও কেন নিরোকে খলনায়ক হিসেবে দেখানো হয়? এর জবাবও দিয়েছেন ড্রেক। তাঁর মতে, নির সম্পর্কে সিংহভাগ তথ্যই এসেছে খ্রিস্টানদের বহাত ধরে। তাঁদের সঙ্গে শত্রুতার সম্পর্ক ছিল নিরোর। তাই যত খারাপ কাজই করে থাকুন না কেন নিরো, রোমকে ধ্বংস হতে দেখে তিনি মোটেই বেহালা বাজাতে মত্ত ছিলেন না বলে মত ইতিহাসবিদদের।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -