J. Robert Oppenheimer: নিজের সৃষ্টি দেখে শিউড়ে উঠেছিলেন নিজেই, অপেনহাইমারকে তাড়াতে চেয়েছিল আমেরিকা, সঙ্কটে পাশে ছিলেন নেহরু
নিজের চোখে না দেখলেও, হিরোশিমা ও নাগাসাকির ভয়াবহতার সঙ্গে পরিচিত আমরা সকলেই। বিজ্ঞানের সুফল এবং কুফলের মধ্যে বিতর্ক উস্কে দেওয়ার জন্য বার বার উঠে আসে ইতিহাসের এই অধ্যায়। কিন্তু হিরোশিমা ও নাগাসাকিকে মনে রাখলেও, পদার্থবিদ জে রবার্ট অপেনহাইমারের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন অনেকেই।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appসিনেমার মাধ্যমে ‘পরমাণু বোমার জনক’, অপেনহাইমারকে জনমনে আবারও ফিরিয়ে এনেছেন হলিউড পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান। তাঁর ছবি ‘অপেনহাইমার’ এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বের আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।
জন্মসূত্রে ইহুদি ছিলেন অপেনহাইমার। বাবা ছিলেন জার্মান। অভিবাসী হিসেবে প্রবেশ আমেরিকায়। তবে আমেরিকাতেই জন্ম অপেনহাইমারের। আমেরিকার পরমাণু বোমা তৈরির স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেন তিনি নিজেহাতে।
শুধুমাত্র বিজ্ঞানের জগতে নয়, আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতেও অত্যন্ত পরিচিত নাম অপেনহাইমার। বিশ্বের প্রথম পরমাণু বোমা তৈরি করেছিলেন তিনি, যা অভিশাপ হয়ে নেমে এসেছিল জাপানের বুকে। যে কারণে কৃতিত্ব জাহিরের থেকে গোটা জীবন অনুশোচনা বয়ে বেড়াতে হয়েছিল তাঁকে।
কিন্তু অপেনহাইমারের ভারত-সংযোগের কথা অল্প সংখ্যক মানুষই জানেন। জীবনের অত্যন্ত সঙ্কটপূর্ণ সময়ে ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ এবং ভারতে বসবাসের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাঁকে।
হোমি জাহাঙ্গির ভাবার আত্মজীবনীতে বিষয়টি খোলসা করেছেন রেখক বখতিয়ার কে দাদাভয়। তিনি জানিয়েছেন, অপেনহাইমার এবং ভাবার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। সংস্কৃত জানতেন অপেনহাইমার, ‘গীতা’ পড়েছিলেন। ভারত নিয়ে আগ্রহও ছিল।
হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে তাঁর তৈরি বোমা নিক্ষেপের পর আমেরিকা সরকারের সঙ্গে সংঘাত দেখা দেয় অপেনহাইমারের। নিজের বিবেকবোধই ধাক্কা খায় তাঁর। হাজার হাজার মানুষের রক্তের দাগ নিজের হাতে দেখতে শুরু করেন তিনি।
তার পর যত দিন বেঁচে ছিলেন, পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করার দাবিতেই লড়াই চালিয়ে যান অপেনহাইমার। বিশেষ করে হাইড্রোজেন বোমা তৈরির বিপক্ষে ছিলেন তিনি। আমেরিকা সরকারের বিপক্ষে মতও দিয়েছিলেন।
পরিবার সূত্রে তো বটেই, ব্যক্তিগত পছন্দের নিরিখেও কমিউনিজমের প্রতি ঝোঁক ছিল অপেনহাইমারের। তাই পরমাণু বোমার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান ‘দেশদ্রোহ’ হিসেবেই সেই সময় গন্য হয়েছিল আমেরিকায়। বিদেশি শক্তির সঙ্গে তাঁর গোপন আঁতাত, এমনকি চরবৃত্তির অভিযোগও ওঠে। দেশের বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ছাড়পত্রও তুলে নেওয়া হয়। চলে যায় মোটা বেতনের চাকরিও।
তার পরেও নিজের অবস্থান থেকে একচুলও সরেননি অপেনহাইমার। তাঁর বিরুদ্ধে উচ্চপর্যায়ের তদন্তও চলছিল। সেই সময় অপেনহাইমারকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার আর্জি নিয়ে জওহরলাল নেহরুর কাছে যান ভাবা। তাতে অপেনহাইমারকে একাধিক বার ভারতে আহ্বান জানান নেহরু। চিঠি লিখে ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণেও উৎসাহিত করেন।
কিন্তু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, নেহরুর অনুরোধ ফিরিয়ে দেন অপেনহাইমার। জানান, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ না করে আমেরিকা থেকে একচুলও নড়বেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হন অপেনহাইমার।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -