Space Science: খালিচোখে দেখা যায় শুধু চাঁদকেই, আসলে পৃথিবীর কি একটিই উপগ্রহ!
কারও একাধিক, কারও এক, কারও আবার শূন্য। উপগ্রহের সংখ্যার নিরিখেই সৌরজগতের গ্রহগুলির পৃথক ক্রমাঙ্ক তৈরি করা সম্ভব। তবে এর মধ্যে চাঁদই সবচেয়ে জনপ্রিয়। সেখানে প্রাণধারণের সম্ভাবনাও গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appচাঁদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই একের পর এক কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি হয়েছে পৃথিবীর বুকে। মহাশূন্যে চক্কর কেটে গবেষণার কাজে লিপ্ত সেগুলি। একেবারে ছোট্টবেলার বিজ্ঞানের বই থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর একটিই উপগ্রহ বলে জেনে এসেছি আমরা, অনবরত যা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে।
কিন্তু পৃথিবীকে কি শুধুমাত্র একা চাঁদই প্রদক্ষিণ করে চলেছে? নাকি হিসেব নিকেশের বাইরে কিছু থেকে গিয়েছে? বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্র যত উন্নত হয়েছে, ততই বেশি করে উঠে এসেছে এই প্রশ্ন।
বিজ্ঞানীদের দাবি, একেবারে নিরেট, ভরযুক্ত এবং স্থায়ী বলতে চাঁদই পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। তবে তবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণে পৃথিবীকে চারিদিক থেকে প্রদক্ষিণ করছে একাধিক মহাজাগতিক বস্তু, যাঁর মধ্যে রয়েছে প্রায় পৃথিবীর সমতুল্য বস্তু, আবার ধুলোর মেঘও।
পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে এই বস্তুগুলিও। তাই প্রযুক্তিগত ভাবে তাদের ক্ষণস্থায়ী উপগ্রহ বলা চলে। ক্ষুদ্র চাঁদ বা ভুতুড়ে চাঁদও বলেন অনেকে। কিন্তু এমন ক্ষুদ্র চাঁদের সংখ্যা ঠিক কত, এক না একাধিক, সংখ্যার ওঠাপড়াই বা কত বার হয়েছে, সে সবের হিসেব বেশ জটিল।
তবে বিজ্ঞানীদের মতে, একেবারে গোড়ার দিকে, প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর আদৌ কোনও উপগ্রহ ছিল না। আজ থেকে প্রায় ৪৪০ কোটি বছর আগে আয়তনে প্রায় মঙ্গলগ্রহের সমান একটি প্রোটোপ্ল্যানেট ‘থিয়া’র সঙ্গে পৃথিবীর ধাক্কা লাগে। তাতে পৃথিবীর কিছুটা অংশ মহাকাশে ছিটকে যায়। তা-ই পরবর্তী কালে চাঁদের আকার ধারণ করে বলে ২০২২ সালে দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দাবি করা হয়।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, ওই সময় এমন আরও কিছু উপগ্রহের সৃষ্টি হয়েছিল। তবে সেগুলির মেয়াদ ছিল ক্ষণস্থায়ী। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে কিছু সময় কক্ষপথে আটকে ছিল। পরে ছিটকে যায় মহাশূন্য।
২০০৬ সালে প্রায় ২০ ফুট চওড়া একটি গ্রহাণু, RH120-র সন্ধান মেলে। প্রায় ১৮ মাস ধরে সেটি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছিল। সে-ই প্রথম চাঁদ ছাড়া অন্য কিছুকে পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরপাক খেতে দেখা যায়।
এর পর ২০২০ সালে CD3 নামের ১১.৫ ফুটের একটি মহাজাগতিক প্রস্তরখণ্ড পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরপাক খাওয়া বন্ধ করে দেয়। তবে প্রায় তিন বছর ধরে সেটি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছিল। সেটি পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্র চাঁদ বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
২০২০ সালেই SO 2020 নামের একটি ক্ষুদ্র চাঁদ চোখে পড়ে বিজ্ঞানীদের। ২০২১-এর শুরুতে সেটিও ছিটকে যায় মহাশূন্যে। পরে যদিও জানা যায়, সেটি মোটেই সৌরজগতে সৃষ্টি কোনও উপগ্রহ নয়, বরম ছয়ের দসকের একটি রকেট বুস্টারের ধ্বংসাবশেষ।
তার আগে ২০১৫ সালে প্রায় ১৩ ঘণ্টার জন্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে দেখা যায় আরও একটি বস্তুকে। সেটিও ক্ষণস্থায়ী উপগ্রহ হতে পারে বলে মনে করতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। পরে যানা যায়, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির একটি টেলিস্কোপ সেটি। ফলে তড়িঘড়ি বিষয়টি সামলে নেওয়া হয়।
এর বাইরেও, 2010 TK7-এর মতো গ্রহাণুকে পৃথিবীর উপগ্রহ বলে উল্লেখ করা হয়। কারণ সূর্য ও পৃথিবী অথবা পৃথিবী ও চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মধ্যে সেগুলির অবস্থান ধরা পড়ে। দুই বৃহত্তর কায়ার মাঝে অভিকেন্দ্রিক শক্তির সৃষ্টি হয়, যাকে বলা হয় ল্যাগ্রেজ পয়েন্ট, যা কিনা ক্ষুদ্রবস্তুকে মহাকাশে স্থিতিশীল অবস্থায় রাখে।
তবে এই ধরনের ক্ষুদ্র উপগ্রহ কখনও চাঁদের মতো পূর্ণতা পায় না। কারণ তার মধ্যে থাকা ধুলো কখনও জমাট বাঁধে না। তাই অভিকেন্দ্রিক শক্তির মধ্যে থেকেও সেগুলি গতিশীল হয়। কখনও ঢোকে, কখনও আবার বেরিয়ে যায়।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -