Runaway Black Hole: সূর্যের চেয়ে ঢের বেশি আয়তন, শব্দের চেয়ে ৪৫০০ গুণ গতি, পলায়নপর কৃষ্ণগহ্বর ছুটে বেড়াচ্ছে মহাশূন্যে
দেখতে একরত্তি কালো বিন্দুর মতো হলেও, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় ঘটনাবলীর সঙ্গে তাদের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। মহাশূন্যে এ বার বিজ্ঞানীদের কার্যত নাকানিচোবানি খাওয়াচ্ছে পলায়নপর এক কৃষ্ণগহ্বর।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appছায়াপথ থেকে ওই কৃষ্ণগহ্বর ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছে বলে মত বিজ্ঞানীদের। জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে মহাশূন্যের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে ওই কৃষ্ণগহ্বর। তা-ও আবার তারার শৃঙ্খলকে লেজে বেঁধে নিয়ে।
কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষণায় উঠে এল এমনই তথ্য। শীঘ্রই ওই গবেষণা অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্সে প্রকাশিত হতে চলেছে। সুবিশাল ওই কৃষ্ণগহ্বরকে দীর্ঘ দিন পর্যবেক্ষণ করেই তার গতিবিধি সম্পর্কি বিশদ তথ্য তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা।
হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে ওই পলায়নপর কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ক্ষুদ্র একটি ছায়াপথ, RCP28-কে পর্যবেক্ষণের সময় আলোর চলমান উজ্জ্বল ধারা চোখে পড়ে বিজ্ঞানীদের। সেটিই ওই কৃষ্ণগহ্বর বলে জানা গিয়েছে, পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব প্রায় ৭৫০ কোটি আলোকবর্ষ।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওই আলোর ধারা ২ লক্ষ আলোকবর্ষের চেয়েও দীর্ঘ। আকাশগঙ্গা ছায়াপথের চেয়ে প্রস্থে দ্বিগুণ। গ্যাসের সংকোচন ঘটে ওই আলোর ধারা তৈরি হয়েছে এবং তা থেকে নতুন নক্ষত্র জন্ম নিচ্ছে বলেও দাবি বিজ্ঞানীদের। আলোর ধারার একেবারে অগ্রভাগে রয়েছে কৃষ্ণগহ্বরটি। সেটির ভর সূর্যের চেয়ে প্রায় ২ কোট গুণ বেশি বলে জানা গিয়েছে। নিজস্ব ছায়াপথ থেকে ছিটকে সেটি ঘণ্টায় প্রায় ৫৬ লক্ষ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অর্থাৎ শব্দের চেয়ে তার গতি ৪ হাজার ৫০০ গুণ বেশি।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির পদার্থ এবং জ্যোতির্বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক পিটার ভ্যান ডোক্কাম জানিয়েছেন, টেলিস্কোপে সরু একটি উজ্জ্বল রেখে ধরা পড়ে, যা একটি ছায়াপথের কেন্দ্রস্থলের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে। পরে হাওয়াইয়ের কেক টেলিস্কোপ ব্যবহার করে দেখা যায়, ওই রেখা এবং একটি ছায়াপথ সংযুক্ত। বোঝা যায়, বৃহদাকার কৃষ্ণগহ্বরটি ছায়াপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসেছে। গ্যাসের তৈরি ওই আলোর রেখা এবং সদ্য তৈরি, সজাগ নক্ষত্র তার গতিপথ বরাবর রয়ে গিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রত্যেক ছায়াপথের কেন্দ্রস্থলেই বৃহদাকার কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে। যে সব কৃষ্ণগহ্বর সক্রিয়, তার মধ্য থেকে প্রায়শই উচ্চগতিতে নানা উপাদান ছিটকে আসে, যা কিনা আলোর রেখা হিসেবে চোখে পড়ে। টেলিস্কোপে যে দৃশ্য দেখা গিয়েছে, একেবারে তার অনুরূপ। কিন্তু সাধারণত উৎসস্থল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর যত সময় যায়, ততই ওই আলোর রেখা দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। বরং ছায়াপথকে ঘিরে রাখা গ্যাসের বলয় ভেদ করে ওই কৃষ্ণগহ্বরটি ছুটে চলেছে এবং তার প্রত্যাঘাতে গ্যাসের সংকোচন ঘটে নতুন নক্ষত্রের উদ্ভব ঘটছে।
কৃষ্ণগহ্বরও যে ছায়াপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে যেতে পারে, এই প্রথম হাতেকলমে তার প্রমাণ মিলল বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। কী করে ওই বৃহদাকার কৃষ্ণগহ্বর ছিটকে বেরিয়ে এল, তার সদুত্তর যদিও মেলেনি এখনও পর্যন্ত। তবে গুলতি ব্যবহারের সঙ্গে এর তুলনা টানা হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, তিনটি অনুরূপ বস্তুর মধ্যে মহাজাগতিক মিথস্ক্রিয়া ঘটলে, তা স্থিতিশীল রূপরেখার দিকে না এগিয়ে, হয় দ্বৈত আকারে নিক্ষিপ্ত হয় অথবা তৃতীয় অংশটি ছিটকে বেরিয়ে যায়।
তাই বিজ্ঞানীদের ধারণা, হতে পারে ওই বৃহদাকার কৃষ্ণগহ্বরটি একসময় যুগ্ব কৃষ্ণগহ্বরের অংশ ছিল। ছায়াপথে মিশে যাওয়ার সময় তৃতীয় একটি কৃষ্ণগহ্বরের আবির্ভাব ঘটে। তাতেই একটি ছিটকে বেরিয়ে যায়। এমন পলায়নপর কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশে স্বাভাবিক ঘটনা কিনা, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা।
image 11
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -