ABP Exclusive: কেকেআর না রাখায় মন খারাপ ছিল মাভির, ৬ কোটি টাকায় কিনে নেয় গুজরাত
তাঁর বয়স তখন আট বা ন’বছর। সবে ক্রিকেট বুঝতে শুরু করেছেন। আর সেই থেকেই খেলাটার প্রেমে পড়েছেন। এমনই ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা যে, পাড়ার মাঠে দাদাকে ছক্কা মারতে দেখে ছাদ থেকে দিলেন লাফ। কনুই ভাঙল। হাড় জুড়লেও, হাত যেন সোজাই হয় না।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appসেই ছেলেই বল হাতে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংকে চুরমার করে দিলেন (Ind vs SL)। অভিষেক ম্যাচে মাঠে নেমেই টিম ইন্ডিয়ার জয়ের নায়ক শিবম মাভি (Shivam Mavi)। যে সাফল্য দেখে উচ্ছ্বসিত তাঁর পরিবার।
শিবমের খুড়তুতো দাদা অনুজ মাভি মেরঠ থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি লাইভকে বলছিলেন, 'ওর সাফল্যে বাড়ির সকলে ভীষণ খুশি। এর চেয়ে বড় আনন্দের মুহূর্ত আসেনি। দারুণ গর্বের মুহূর্তও। দীর্ঘদিন ধরে এই দিনটির অপেক্ষা ছিল। শিবম জাতীয় দলে সুযোগ পেতেই সকলে উচ্ছ্বসিত ছিলাম। আর অভিষেকেই এইরকম পারফরম্যান্স। টিভিতেই সকলে খেলা দেখেছেন।'
অনুজই শোনালেন শিবমের ছোটবেলার দুষ্টুমির কাহিনি। বলছিলেন, 'এমনিতে ও খুব শান্ত স্বভাবের। বাড়িতে থাকলে সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। কম কথা বলে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায়।'
যোগ করলেন, 'তবে দুটো ঘটনা ঘটিয়েছিল। প্রথমটার সময় ওর বয়স ৮ বা ৯। পাড়ার মাঠে খেলা হচ্ছিল। ও ছাদে বসে খেলা দেখছিল। বড় দাদা সচিন একটা ছক্কা মেরেছিল। তা দেখে উত্তেজনায় লাফ মেরে বাড়ির ছাদ থেকে নীচে পড়ে গিয়েছিল। বাঁহাতের কনুই ভেঙে গিয়েছিল। অনেকদিন লেগেছিল সেরে উঠতে।'
অনুজ আরও বললেন, 'একবার বিদ্যুতের খোলা তারে হাত দিয়েছিল। তড়িদাহত হয়। কাঁধে প্রবল চোট পেয়েছিল। সেই ধাক্কা সামলে উঠতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগেছিল ওর।'
উত্তর প্রদেশের মেরঠে বাড়ি। মাবানার পাশেই সিনা গ্রাম। সেখানেই মাভি পরিবারের বসবাস। বাবা ঠিকাদারের কাজ করেন। দুই ভাই বোন। শিবম ও শালু। নয়ডায় বিড়লা বম্ব অ্যাকাডেমিতে ফুলচন্দ শর্মার প্রশিক্ষণে ক্রিকেটে হাতেখড়ি শিবমের। তবে শুরুতে তিনি ব্যাটসম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। অনুজ বলছেন, 'প্রথমে উত্তর প্রদেশের হয়ে খেলত। তবে এখানে সুযোগ পেতে সময় লাগছিল। ও ব্যাটিংয়েও খুব মনোযোগী ছিল। আমরা চেয়েছিলাম ও অলরাউন্ডার হোক। সেই কারণে দিল্লিতে যায়। দিল্লির অনূর্ধ্ব ১৪ দলে খেলেছে। সেখান থেকে ফের কোচদের অনুরোধে উত্তর প্রদেশে ফেরে।'
ভারতের হয়ে ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে বল হাতে নজর কেড়েছিলেন। তাঁর বলের গতি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তি। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী সেই দল থেকে পৃথ্বী শ, শুভমন গিল, অর্শদীপ সিংহরা জাতীয় দলে আগেই খেলেছেন। শিবমকে অপেক্ষা করতে হল চার বছর।
২০২২ সালের শেষ কয়েকটা দিন দুর্দান্ত কেটেছে শিবমের। প্রথমে আইপিএলের মিনি নিলামে গুজরাত টাইটান্স ৬ কোটি টাকায় তাঁকে কিনেছে। তারপরই শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য জাতীয় দলে ডাক। অনুজ বলছেন, 'সেই সময় উত্তরপ্রদেশ-বঢোদরা রঞ্জি ম্যাচ চলছিল। ম্যাচ খেলে রাত সাড়ে তিনটেয় ও আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল।' যোগ করলেন, 'তবে কলকাতা নাইট রাইডার্স ওর প্রথম দল। তাই কেকেআর ছেড়ে দেওয়ায় মন খারাপ হয়েছিল। শেষ মরসুমে কেকেআর শিবমকে সাত কোটি ২০ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। কিন্তু চোট থাকায় ও নিজের সেরাটা দিতে পারেনি।'
চোটের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে দীর্ঘদিন। বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে রিহ্য়াবিলিটেশন চলেছে। কিন্তু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েননি কখনও। অনুজ বলছেন, 'ভারতীয় দলের জার্সি পরে মাঠে নামা ওর স্বপ্ন ছিল। আর সেই স্বপ্নপূরণের তাগিদই ওর কাছে সবচেয়ে বড় প্রেরণা ছিল। তাই চোটের জন্য মাঠের বাইরে থাকলেও কখনও ভেঙে পড়েনি। স্বপ্নপূরণ হয়েছে। শিবম এখনও ক্রিকেটকে অনেক কিছু দেবে।'
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -