IPL 2024: মানসিক অবসাদে সারারাত জেগে থাকতেন, এখন বোলারদের ঘুম কেড়েছেন
আইপিএলের আগে তাঁর নামই হয়তো শোনেননি অনেকে। তবে পাঞ্জাব কিংসের হয়ে বিস্ফোরক ব্যাটিং করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিয়েছেন। তিনি, আশুতোষ শর্মা। পাঞ্জাব কিংসের জার্সিতে প্রায় প্রত্যেক ম্যাচে নিয়ম করে যিনি বোলারদের ধ্বংস করছেন।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appপাঞ্জাব কিংসের ব্যাটিং অর্ডারে আট নম্বরে নামছেন আশুতোষ। এবং প্রত্যেক ম্যাচে ঝোড়ো ইনিংস খেলছেন। তাঁর প্রথম নজরে পড়া গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে। দুশো রান তাড়া করতে নেমে পাঞ্জাবের স্কোর যখন ৭০/৪, ফিরে গিয়েছিলেন শিখর ধবন, জনি বেয়ারস্টোর মতো পাঞ্জাব দলের রথী-মহারথীরা, তখন ব্যাট হাতে রুখে দাঁড়ান অনামী আশুতোষ। শশাঙ্ক সিংহের সঙ্গে আগ্রাসী পার্টনারশিপে নাটকীয়ভাবে ম্যাচ জিতিয়ে দেন পাঞ্জাবকে। ১৭ বলে ৩১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন আশুতোষ।
মঙ্গলবার ফের একবার দেখা গিয়েছে আশুতোষের ব্যাটিং বিক্রম। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে মাত্র ১৫ বলে ৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। দলকে প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিলেন অবিশ্বাস্যভাবে। শেষ পর্যন্ত মাত্র ২ রানে ম্যাচ হারে পাঞ্জাব। তবে আশুতোষকে নিয়ে ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছে।
চাপের মুখে যখন বড় নামেরা ব্যর্থ, তখন এত আত্মবিশ্বাস পান কোথা থেকে? এবিপি লাইভকে আশুতোষ বলেছেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে এরকম পরিস্থিতি সামলে সামলে আমি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। ক্রিজে যাওয়ার আগে ডাগ আউটে বসে বসেই ভাবি, আমি ঠিক দলকে জিতিয়ে দেব। নিজের দক্ষতা নিয়ে আমি ভীষণ আত্মবিশ্বাসী।’
আইপিএল শুরুর আগে প্রস্তুতি শিবির তাঁকে সাহায্য করেছে বলেও জানিয়েছেন আশুতোষ। বলেছেন, ‘প্রস্তুতি শিবিরে শিখর পাজি, সঞ্জয় বাঙ্গার স্যর আমাকে এইরকম পরিস্থিতিতে ফেলে ব্যাটিং করিয়েছেন। তাতে খুব উপকৃত হয়েছি। এরকম চাপের মুখে শেষ চার ওভারে কী করব, তা নিয়ে আমি তৈরিই থাকছি। সঞ্জয় স্যর বলেই রেখেছেন, শেষ চার ওভার পাবে। তাতেই নিজেকে চেনাতে হবে।’
আশুতোষের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার কাহিনিও যেন গল্পের মতো। মাত্র আট বছর বয়সে বাড়িছাড়া। মধ্য প্রদেশের রত্লামের ছেলে চলে যান ইনদওরে। আশুতোষ বলেছেন, ‘বাবা-মাকে ছেড়ে থাকাটা ছিল ভীষণ কষ্টের। ওই বয়সে কী খাব, সেটা ভাবতে হয়েছে। খাবার কেনার টাকা থাকত না। সেই জন্য আম্পায়ারিংও শুরু করি। কারণ, তাতে একবেলার খাবার অন্তত মাঠেই পেয়ে যেতাম। আর এক বেলা কিছু একটা বানিয়ে নিতাম। ইনদওরে খুব ছোট্ট ঘরে থাকতাম। তবে মধ্য প্রদেশের ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে অময় স্যর খুব সাহায্য করেছিলেন।’
লড়াইয়ের সেখানেই শেষ ছিল না। কারণ, রাজ্য দলের হয়ে পারফর্ম করেও বাদ পড়তে হয়েছে। আশুতোষের কথায়, ‘মধ্য প্রদেশের হয়ে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৮৪ রান করেছিলাম। কিন্তু পরের মরশুমে পেশাদার কোচ এসেছিলেন। তাঁর হয়তো আমাকে পছন্দ হয়নি। ট্রায়াল ম্যাচে ৪৫ বলে ৯০ রান করেও বিকেলে জানতে পারি, সৈয়দ মুস্তাক আলির দলে আমাকে রাখা হয়নি। অনূর্ধ্ব ২৩ দলেও ভাল রান করেছিলাম। তবু সিনিয়র দলে খেলানো হচ্ছিল না।’
তার মাঝেই করোনা অতিমারীর ধাক্কা। দলের সঙ্গে সফর করা ক্রিকেটারের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়। আশুতোষ বলছেন, ‘আমি ২০ জনের দলে থাকলেও হোটেলে বসে থাকতাম। মাঠ দেখতে পেতাম না। সারাদিন জিম আর হোটেলের রুমেই কেটে যেত দিন। মানসিক অবসাদে ভুগতাম। রাতে ঘুম হতো না। ভাবতাম, কী হবে আমার কেরিয়ারের! আমাকে কেউ কিছু বলতও না। তবু হাল ছাড়িনি। যদিও সেই ২-৩ বছর ভয়ঙ্কর কেটেছিল।’
তারপর রেলওয়েতে চাকরির সুযোগ। ২৫ বছরের ক্রিকেটার যোগ দেন রেলওয়েজ দলে। আশুতোষ বলছেন, ‘রেল তাদের অনূর্ধ্ব ২৩ দলে খেলার সুযোগ করে দেয়। গত মরশুমে সিনিয়র দলের হয়ে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিও খেলেছি। আমার কেরিয়ার নতুন গতি পায়।’
কাকে আদর্শ মনে করেন? আশুতোষ বলছেন, ‘গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও সূর্যকুমার যাদবের ভক্ত আমি। ওদের ব্যাটিং দেখে অনেক কিছু শিখছি।’ ২ ম্যাচ খেলে দুশো স্ট্রাইর রেট রেখে রান করেছেন। আপাতত পাঞ্জাব কিংসকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আশুতোষই। তথ্য - সন্দীপ সরকার, ছবি - পিটিআই
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -