নয়া দিল্লি: সনাতম ধর্ম (sanatam dharma) অনুযায়ী, পূর্ণিমা এবং অমাবস্যার আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে। তবে এর মধ্যে ভাদ্রমাসের অমাবস্যার গুরুত্ব আলাদা। এই অমাবস্যাকে শাস্ত্রমতে এক এক নামে অভিহিত করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে একে 'আলোকামাবস্যা' কিংবা 'তারা নিশি', আবার 'কৌশিকী অমাবস্যা'ও বলা হয়। আর এই ঘোর অমানিশি রাত্রি তন্ত্রমতে মা কালীর আরাধনার পুণ্য লগ্ন, এমনটাই মনে করা হয়। (religion)

শাস্ত্রমতে, যে কোনও অমাবস্যা তিথিই তন্ত্রচর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর মধ্যে কিছু অমাবস্যা পালন গৃহস্থের জন্যও অত্যন্ত উপযোগী। ইতিমধ্যেই তারাপীঠে 9Tarapith) তারা মায়ের বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়েছে। ভোরবেলা মঙ্গলারতি দিয়ে পুজোর সূচনা হয়। মঙ্গলারতির পর পাঁচরকম ফল, পাঁচরকম মিষ্টি, ক্ষীর দিয়ে দেওয়া হয় শীতল ভোগ। এদিন মায়ের শিলামূর্তিকে স্নান করানোর পর পরানো হয় রাজবেশ।

তন্ত্রমতে এই রাতকে ‘তারা রাত্রি' বলা হয়ে থাকে। এই অমাবস্যার বিশেষ লগ্নে স্বর্গ ও নরক উভয় স্থানের দরজা মুহূর্তের জন্য খোলে ও সাধক নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন।

শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহাসরস্বতী দেবীর কাহিনী থেকে জানা যায়, একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক দুই অসুর কঠিন সাধনার মাধ্যমে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করেছিল। ব্রহ্মা তাদের চতুরানন বর দেন। এই বরের ফলে শুম্ভ-নিশুম্ভকে কোন পুরুষ বধ করতে পারবেন না। মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি এমন কোন নারী তাদের বধ করতে পারবেন। 

এই অমাবস্যায় গোটা ব্রহ্মাণ্ডে দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় মহাবিদ্যা 'তারা দেবী'কে 'মহাকালী' রূপে আহ্বান করা হয়। কথিত আছে, এই দিনেই নাকি সাধক শ্রেষ্ঠ বামাক্ষ্যাপা তাঁর 'বড় মা' অর্থাৎ 'তারা দেবী'র দর্শন পেয়ে সিদ্ধিলাভ করেন। বলা হয়, এই দিনে কোনও ভক্ত 'তারা দেবী'কে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করলে তার মনঃস্কামনা পূর্ণ হয়। উল্লেখ্য, প্রতিবছরই আজকের দিনে বীরভূমের তারাপীঠ মন্দিরেও 'মহাকালী'র আহ্বান করা হয়।  
 
 
মার্কেণ্ডেয় পুরাণ অনুযায়ী শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধের জন্য 'দেবী দুর্গা' যখন ক্রোধান্বিত হন তখন তাঁর ভ্রূকুটি যুগল থেকে 'কৌশিকী দেবী' আবির্ভূতা হন এবং অসুর ভাতৃদ্বয় শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। সেই থেকেই এই কৌশিকী দেবী 'কালী' তথা 'মহাকালী' রূপে পূজিতা হন। হিন্দু ধর্ম মতে এই অমাবস্যা তিথি নক্ষত্রেই কৌশিকী দেবী আবির্ভূতা হন। আর সেই কারণেই এই অমাবস্যা তিথি নক্ষত্রের নামকরণ হয় কৌশিকী অমাবস্যা।