ময়ি সর্বাণি কর্মাণি সংন্যস্যাধ্যাত্মচেতসা।
নিরাশীর্নির্মমো ভূত্বা যুধ্যস্ব বিগতজ্বরঃ।।৩০।।
ভগবদ্গীতার তৃতীয় (Gita Gyan) অধ্যায় অর্থাৎ কর্মযোগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত অর্জুনকে (Arjun) পরমাত্মার প্রকৃত রূপ চেনাতে নানা উপমা দিয়েছেন। প্রতিটি শ্লোকেই তিনি বিভিন্ন ভাবে ঈশ্বরের স্বরূপকে চিনিয়েছেন। যেমন এই ৩০ নম্বর শ্লোকে তিনি বলেছেন, অন্তর্যামী পরমাত্মা সকলের মধ্যে অবস্থিত। এই কথাটি মনে রাখতে হবে। তারপর নিবেদিত চিত্তে যদি সমস্ত কর্ম ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করতে হবে। মনে করতে হবে আকাঙ্ক্ষাশূন্য। মমতাবর্জিত ও শোক-তাপরহিত হয়ে তিনি অর্জুনকে যুদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন।কারণ এর আগেই অর্জুনকে ভগবান বলেছেন স্থিতধী পুরুষ নির্মোহ হন, দুঃখে-সুখে অবিচল হন। কুরুক্ষেত্রে নিজের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে হবে ভেবে যখন তৃতীয় পাণ্ডব কাতর, তাঁর মন যখন দ্বিধায় ডুবে যাচ্ছে, তখনই তাঁকে ভরসা যুগিয়েছেন শ্রীকৃষ্ণ। বলছেন, হে অর্জুন! অধ্যাত্মচেতনা-সম্পন্ন হয়ে তোমার সমস্ত কর্ম আমাকে সমর্পণ কর এবং মমতাশূন্য, নিষ্কাম ও শোকশূন্য হয়ে তুমি যুদ্ধ কর। (religion)
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে এক সময় অস্ত্রত্যাগ করতে চেয়েছিলেন অর্জুন। কিন্তু কৃষ্ণই তাঁকে কর্তব্যে অনড় থাকতে বলেন। তিনি বলেন, ভগবানকে সর্বশক্তির আধার মনে করতে হবে। ঈশ্বরকে সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ, সর্বেশ্বর এবং পরম প্রাপ্য, পরম গতি, পরম হিতৈষী, পরম প্রিয়, পরম সুহৃদ, পরম দয়ালু, ভাবত হবে। নিজের অন্তঃকরণ ও ইন্দ্রিয়, শরীর ও শরীরের দ্বারা করা কাজ, সবকিছুকে ভগবানের বলে জানতে হবে। মনে করতে হবে, নিজের কিছুই করার শক্তি নেই। ভগবানই সর্বপ্রকার শক্তি প্রদান করেন ।ভগবানই নিজ ইচ্ছানুযায়ী সব কর্ম করিয়ে নেন। নিজেকে নিমিত্তমাত্র ভাবতে হবে। তাকেই বলা হয় ‘অধ্যাত্ম চিত্ত দ্বারা সমস্ত কর্ম ভগবানে সমর্পণ করা'। ভগবান এই শ্লোকের মাধ্যমে অর্জুনকে আশা, মমতা ও সন্তাপরহিত হয়ে যুদ্ধ করতে বলেছেন।
এর পরবর্তী শ্লোকে ভগবান বলেছেন,
যে মে মতমিদং নিত্যমনুতিষ্ঠন্তি মানবাঃ।
শ্রদ্ধাবন্তেহনসূয়ন্তো মুচ্যন্তে তেহপি কর্মভিঃ।।৩১।।
এই শ্লোকের মাধ্যমে ভগবান বোঝাতে চেয়েছেন, আমার নির্দেশ অনুসারে যে-সমস্ত মানুষ তাঁদের কর্তব্যকর্ম অনুষ্ঠান করেন এবং যাঁরা শ্রদ্ধাবান ও মাৎসর্য রহিত হয়ে এই উপদেশ অনুসরণ করেন, তাঁরাও কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হন।