কলকাতা : আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার সময় গীতা ছুঁয়ে সত্য বচনের শপথ নেওয়ার রীতি রয়েছে। কারণ হিন্দুদের (Hindu) কাছে এতটাই পবিত্র গীতার বাণী (Gita) । মনে করা হয়, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (Bhagvad Gita) হল সাক্ষাৎ ভগবানের অমৃত বাণী। হিন্দুধর্মে গীতার মহিমা অপরিসীম। অসীম। গীতার যথার্থ বর্ণনার সামর্থ্য কারোরই নেই। কথায় বলে, শেষ, মহেশ, গণেশও গীতার মহিমা পুরোটা ব্যাখ্যা করতে পারেননি, তবে তা মানুষ কীভাবে করবে ! গীতার রহস্য ভেদ করা বড়ই কঠিন। পণ্ডিতরা বলছেন, গীতার মহিমা শাস্ত্রের অধিক। বেদ ব্যাসের কথায়, গীতা শোনা, কীর্তন, পাঠ করতে হবে। গীতাকে ধারণ করতে হবে। তাহলে অন্য শাস্ত্রপাঠের কী প্রয়োজন ? কারণ গীতা স্বয়ং পদ্মনাভ নারায়ণের মুখনিসৃত'
গীতাকে জ্ঞানের সমুদ্র বলা চলে। এর সংকলন করেছিলেন ব্যাসদেব ও শুনেছিলেন অর্জুন। গীতার একেক অধ্যায়ে রয়েছে জীবনের একেক পাঠ। যে পাঠে ধ্রুবতারা করে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। আজ আলোচনা করা হচ্ছে দ্বিতীয় অধ্যায়ের একটি বহুচর্চিত শ্লোক নিয়ে। ৪৭ নম্বর শ্লোক এটি। যেখানে লেখা রয়েছে -
কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।
মা কর্মফলহেতুভূমা তে সঙ্গোহস্ত্বকর্মণি৷৷
যার অর্থ, তোমার কর্মেই অধিকার, তার ফলে নয়। তাই তুমি কর্মফলের হেতু হয়ো না আবার কর্মত্যাগেও যেন তোমার প্রবৃত্তি না হয় ৷৷
ব্যাখ্যা : মানুষকে নতুন কাজ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়। সে যদি নিজের অধিকার অনুসারে পরমেশ্বরের নির্দেশ পালন করতে থাকে, তাহলে সে পরম আত্মাকে লাভ করতে পারবে। ওই কাজে বা কাজের ফলে তার আসক্তি থাকবে না। কর্মফল কী হবে, কীভাবে তিনি তা লাভ করবেন সেই ভাবনা ত্যাগ করতে হবে। কর্মফল কার কপালে কেমন করে জুটবে, তা ঠিক করে দেন ঈশ্বর। মানুষ তা কোনওভাবেই ঠিক করতে পারে না। তাই সেই চিন্তা দূরে রেখে কর্মে মনোনিবেশ করাই শ্রেয়। এমনকী এ জন্মের কর্মফল কেউ এই জন্মেই পাবে, নাকি অন্য জন্মে, তাও জানা নেই ! সেই সঙ্গে ভগবান বোঝাতে চেয়েছেন, কর্ম না-করাতেও যেন আসক্তি না হয়। বিহিত কর্ম ত্যাগ করাকে ঠিক কাজ বলে মনে করা হয় না। অর্থাৎ কর্ম না করা, বা তা থেকে সরে আসা ঠিক নয়। তাহলে কর্ম কোন পথে করা দরকার, তার ব্যাখ্যাও রয়েছে পরবর্তী শ্লোকে।
( তথ্যসূত্র: শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী), গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর )
আরও পড়ুন :