কলকাতা: ভগবদ্ গীতা পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত, আর গঙ্গা ভগবানের চরণপদ্ম থেকে উদ্ভূত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভগবদ্ গীতার গুরুত্ব গঙ্গার চেয়েও বেশি, এমনটাই মনে করা হয়। যেহেতু গীতা স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের মুখপদ্ম থেকে নিঃসৃত হয়েছেন। সেই গীতা সুন্দরভাবে পাঠ করতে হবে। অন্যান্য বহু রকমের শাস্ত্রের প্রয়োজন নেই।
সপ্তম অধ্যায়ে যেমন শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখা উচিত। রাখলে কী হয়। বিশ্বরূপ দর্শনের আগে জীবন দর্শন বুঝিয়েছিলেন তাঁকে।
কী বলেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ?
স তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে।
লভতে চ ততঃ কামান্ময়ৈব বিহিতান্ হি তান্।।২২।।
অর্থাৎ, সেই ব্যক্তি শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই দেবতার আরাধনা করেন এবং সেই দেবতার কাছ থেকেই আমারই মাধ্যমে বিহিত কাম্য বস্তু অবশ্যই লাভ করেন।
এরপর তিনি বলেছেন-
অন্তবত্তু ফলং তেষাং তদ্ ভবত্যল্পমেধসাম্।
দেবান্ দেবযজো যান্তি মদ্ভক্তা যান্তি মামপি।।২৩।।
অর্থাৎ- অল্পবুদ্ধি ব্যক্তিদের আরাধনা লব্ধ সেই ফল অস্থায়ী। দেবোপাসকগণ দেবলোক প্রাপ্ত হন, কিন্তু আমার ভক্তের আমার পরম ধাম প্রাপ্ত হন।
অব্যক্তং ব্যক্তিমাপন্নং মন্যন্তে মামবুদ্ধয়ঃ।
পরং ভাবমজানন্তো মমাব্যয়মনুত্তমম্।।
বুদ্ধিহীন মানুষেরা, যারা আমাকে জানে না, মনে করে যে, আমি পূর্বে অব্যক্ত নির্বিশেষ ছিলাম, এখন ব্যক্তিত্ব পরিগ্রহ করেছি। তাদের অজ্ঞতার ফলে তারা আমার অব্যয় ও সর্বোত্তম পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত নয়।
অর্জুন-সারথি বলেন,
নাহং প্রকাশঃ সর্বস্য যোগমায়াসমাবৃতঃ।
মূঢ়োহয়ং নাভিজানাতি লোকো মামজমব্যয়ম্।।২৫।।
অর্থাৎ- আমি মূঢ় ও বুদ্ধিহীন ব্যক্তিদের কাছে কখনও প্রকাশিত হই না। তাদের কাছে আমি আমার অন্তরঙ্গ শক্তি যোগমায়ার মাধ্যমে আবৃত থাকি। তাই, তাঁরা আমার অজ ও অব্যয় স্বরূপকে জানতে পারে না।
সবশেষে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-
বেদাহং সমতীতানি বর্তানাননি চার্জুন।
ভবিষ্যাণি চ ভূতানি মাং তু বেদ ন কশ্চন।।২৬।।
হে অর্জুন! পরমেশ্বর ভগবানরূপে আমি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে অবগত। আমি সমস্ত জীব সম্বন্ধে জানি, কিন্তু আমাকে কেউ জানে না।
(তথ্যসূত্র: শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী), গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর )