ভগবদ্গীতার (Gita) তৃতীয় অধ্যায় কর্মযোগে শ্রী ভগবান ভক্তকে তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রুকে চিনিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন


কাম এষ ক্রোধ এষ রজোগুণসমুদ্ভবঃ ।

মহাশনো মহাপাপমা বিদ্ধ্যেনমিহ বৈরিণম্ ।। ৩য় অধ্যায়-৩৭ ।।

অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ (Lord Krishna) বলছেন, রজোগুণ থেকে উৎপন্ন এই কাম এবং ক্রোধ, এ ভোগের দ্বারা কখনই তপ্ত হয় না আর অত্যন্ত পাপকারক—একেই তুমি এই বিষয়ে মহাবৈরী বলে জানবে ৷৷  (religion) 


ভগবান বিভিন্ন অধ্যায়েরই অর্জুনকে বোঝাতে চেয়েছেন কোন কোন রিপু মানুষের সবথেকে বড় চারিত্রিক শত্রু। ভগবান বলেছেন, নানা রিপুর মধ্যে রাগ আর হিংসাই মানুষের সবথেকে বড় ক্ষতি করে।  রাগ আর হিংসেরই প্রতিফলন হল কাম আর ক্রোধ। আর ভগবান বলেছেন কাম তার মধ্যে সবথেকে বেশি ক্ষতিকারক। কারণ রাগের স্থূলরূপ হচ্ছে কাম।  


ভগবান নানাভাবে বুঝিয়েছেন, ক্রোধের উৎপত্তি হয়ই কাম থেকে। তাই কেউ যদি অন্যায্য কামনাকে মারতে পারে, তাহলে তার রাগ আপনা-আপনিই নাশ হয়ে যাবে।  তাই ভগবান বিভিন্ন শ্লোকে কাম নাশের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।  তবে এমনও নয় জগতে যে কোনও পাপের কারণ শুধুমাত্র কামই। কারণ যাবতীয় পাপের মূলে যেমন আছে কাম , তেমন আছে অমীমাংসিত ক্রোধ, অসূয়া।  


আর এই কাম আর ক্রোধ, অশেষ, সর্বগ্রাসী। ভগবান ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন হাজার ভোগ করে নিলেও কামনা ফুরোয় না। লালসা পূর্ণ হয় না। ঘি দিলে যেমন আগুন আরও বৃদ্ধি পায়, তেমনই মানুষ যত অধিক ভোগ করে ততই তার ভোগতৃষ্ণা বেড়ে যায়। কামনার ভার বেড়ে যায়। তাই কেউ যদি মনে করেন ভোগ করে নিতে পারলেই কামের আগুন নিভে যাবে, তা কখনই সম্ভব হয় না।  


ভগবান মনে করেন, ‘কাম’ মানুষকে তার অনিচ্ছাসত্ত্বেও জোর করে পাপের দিকে ঠেলে দেয়। আর তার ফলে তার কপালে জোটে  নরক-ভোগ। তাই কল্যাণকামী মানুষের মহাশত্রু হল কাম। 


গীতার পরবর্তী শ্লোকগুলিতেও এই ভাবনারই প্রতিফলন পাওয়া যায়।  


ধূমেনাব্রিয়তে বহ্নির্যথাদর্শো মলেন চ। 

যথোল্বেনাবৃতো গর্ভস্তথা তেনেদমাবৃতম্।।৩৮।। 


অর্থাৎ,
অগ্নি যেমন ধূম দ্বারা আবৃত্ত থাকে, দর্পণ যেমন ময়লার দ্বারা আবৃত্ত থাকে অথবা গর্ভ যেমন জরায়ুর দ্বারা আবৃত থাকে, তেমনই জীবাত্মা বিভিন্ন মাত্রায় এই কামের দ্বারা আবৃত থাকে।                

( তথ্যসূত্র: শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী), গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর )