গীতা ( Gita ) শুধু এক ধর্মগ্রন্থ নয়, গীতায় শ্রীকৃষ্ণের ( Sri Krishna ) মুখনিসৃত প্রতিটি উক্তিই জীবনে বিভিন্ন সময় সঠিক পথ দেখায়। গীতাকে পণ্ডিতরা বলেন পরম রহস্যময় গ্রন্থ।  বেদের সারতত্ত্ব রয়েছে গীতায়। গীতা যুগে যুগে মানুষের জীবনের নানা সমস্যার পথ দেখিয়ে এসেছে। পণ্ডিতরা বলেন, এই ধর্মগ্রন্থের রচনা এতটাই সরল, যা মানুষ সহজেই আত্মীকরন করতে পারে। 


পণ্ডিতরা মনে করেন, গীতা সর্বদা নতুনই থাকে। এই গ্রন্থের একেক অধ্যায়ে একেক রকমের বার্তা দেওয়া হয়েছে। যেমন দ্বিতীয় অধ্যায় অর্থাৎ সাংখ্য যোগ। এই অধ্যায়ে অর্জুনকে তাঁর শোক কাটিয়ে ওঠার পথ দেখিয়েছেন পার্থসারথি। প্রিয়জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে গিয়ে তৃতীয় পাণ্ডবের হৃদয় যখন দ্বিধাগ্রস্ত, তখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে শুনিয়েছেন শোক নিবৃত্তির উপায়। 

প্রিয়জন বিয়োগের শোক ভোলার উপায় কী তা জানতে চাইলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নানা উপমায় ব্যাখ্যা করেছেন আত্মার অমরত্বের কথা।  ত্রিশতম শ্লোক পর্যন্ত শ্রীকৃষ্ণ আত্মতত্ত্ব বর্ণনা করেছেন। আত্মতত্ত্বের বর্ণনা এখানেই বিস্তারিতভাবে করা হয়েছে, তাই  এই অধ্যায়ের নাম হল 'সাংখ্যযোগ"।  

এই অধ্যায়ের ২০ তম শ্লোকে ভগবান বলছেন,                    


' ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিন্ নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ


অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।'  

যার অর্থ হল, আত্মার মৃত্যু নেই। আত্মা অমর। বদলায় শুধু দেহ। আত্মার কখনও জন্ম হয় না এবং আত্মার মৃত্যুও নেই।  আত্মার অস্তিত্ব উৎপত্তিসাপেক্ষ নয়, কারণ আত্মা জন্ম-রহিত। আত্মা নিত্য। আত্মা সনাতন। আত্মা পুরাতন । শরীরের মৃত্যু হয় কিন্তু আত্মা বিনষ্ট হয় না । অর্থাৎ কিনা মানুষ যেমন জামা বদল করে, আত্মা বদল করে দেহ।  বলা হয়েছে আত্মা চিরকালীন এবং সর্বদা একরূপে স্থায়ী। দেহনাশে এর বিনাশ হয় না ।  গীতা এই ভাবেই বিভিন্ন শ্লোকের মাধ্যমে আত্মার ব্যাখ্যা করেছেন। 

এই দ্বিতীয় অধ্যায়েই তো তাই শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, তোমার কর্মেই অধিকার, তার ফলে নয়। তাই তুমি কর্মফলের হেতু হয়ো না আবার কর্মত্যাগেও  যেন তোমার প্রবৃত্তি না হয়। এই ভাবেই শোক বিহ্বল, দ্বিধাগ্রস্ত পার্থকে জীবনদর্শন করান তাঁর বন্ধু, তাঁর সারথি শ্রীকৃষ্ণ। 
( তথ্যসূত্র : শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী), গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর )


আরও পড়ুন  :


'ভক্ত যেভাবে ভজনা করবে, আমিও সেভাবে তাঁর পাশে থাকব', গীতায় ঈশ্বর ভজনের পাঠ দিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ