কলকাতা : আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া অর্থাৎ রথযাত্রা এবং শুক্লা দশমী অর্থাৎ উল্টোরথ বা রথের পুনর্যাত্রা মাঝের শনিবার ও মঙ্গলবারে পূজিত হন দেবী বিপত্তারিণী। এই বছর শনিবারটি পড়েছিল অম্বুবাচীর মধ্যে। এই সময় দেবীপুজো হয় না বেশিরভাগ স্থানেই। তাই মঙ্গলবার অর্থাৎ ২৭ জুন, দেবীবন্দনার কার্যত একটাই দিন। তাই এদিনই বাংলার বিভিন্ন মন্দিরে পূজিত হচ্ছেন বিপত্তারিণী দেবী।
বিপত্তারিণী দেবীর পুরাণ-কথা
পুরাণ অনুযায়ী, শুম্ভ-নিশুম্ভ, অসুর ভাইদের হাত থেকে রক্ষা পেতে দেবতারা মহাশক্তিশালী মহামায়ার স্তব করেন। সেই সময় শিব-অর্ধাঙ্গিনী পার্বতী সেখানে হাজির হন। দেবতাদের জিজ্ঞাসা করেন, “ তোমরা কার পুজো করছো ।” দেবী নিজেই দেবতাদের পরীক্ষা করার জন্য এই প্রশ্ন করেন। কিন্তু, দেবতারা তাঁকে চিনতে পারেননি। তখন পার্বতী নিজের রূপ ধরেন, সকলের সামনে আবির্ভূত হন। তিনি এসে বলেন, “তোমরা আমারই স্তব করছ। চিনতে পারনি আমায়।” তারপর তিনি ভয়ঙ্কর শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করেন অনায়াসে। দেবতাদের বিপদ থেকে রক্ষা করেন। সেই থেকে বিপত্তারিণী মায়ের পুজো শুরু। তারপর মর্ত্যলোকে এই পুজোর প্রচলন হয়। বিপদ যিনি তারণ করেন, তিনিই বিপত্তারিণী।
কথিত আছে, দেবী চণ্ডীর আরেক রূপ এই বিপত্তারিণী দেবী। দেবী বন্দনায় জীবনের বহু বিপদ দূর হয়ে যায়। এই পুজোর ক্ষেত্রে মানতে হবে কয়েকটি নিয়ম। এই পুজোয় সব উপকরণই লাগে ১৩টি করে। প্রয়োজন হয় -
- ১৩ রকম ফুল
- ১৩ রকম ফল
- ১৩ টি পান
- ১৩ টি সুপারি
- ১৩ গাছা লাল সুতো
- ১৩ গাছা দূর্বা
- এই লাল সুতোয় দূর্বার গোছা ১৩ টি গিঁটে বাঁধতে হয়। এই ভাবেই তৈরি হয় বিপত্তারিণীর ধাগা ।
মন্দিরে পুজো না দিয়ে যাঁরা বাড়িতেই পুজো সারেন, তাঁরা বাড়িতে আম্রপল্লব-সহ ঘট স্থাপন করেও পুজো করতে পারেন। পুজো সমাপ্ত করে পড়তে হবে বিপত্তারিণীর ব্রতকথা। এই পুজোর অন্যতম অঙ্গ ব্রতকথা পাঠ। বাড়ির লোকেদেন নামে ধাগা উৎসর্গ করা হয়। লাল ধাগা হাতে পড়িয়ে দেওয়া নিয়ম।
মনে রাখতে হবে -
- বিপত্তারিণী ব্রতের আগের দিন, ব্যক্তি শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার খেতে হয়।
- ব্রতের দিনে কোনও খাবার খাওয়া যায় না। পুজোর পর উপবাস ভাঙা হয়।
- সমস্ত রকমের বাধা, বিপত্তি ও বিপদ থেকে সন্তান এবং পরিবারকে রক্ষা করার জন্য এই পুজো করা হয় ।
- এই পুজোর দিন চাল ও গমের কোনও খাবার না খাওয়াই ভাল ।