নলহাটি : বহু সাধকের সাধনার সাক্ষী । জঙ্গল ঘেরা একটি ছোট্ট টিলা। নলহাটির (Nalhati) মাঝ বরাবর ছোট্ট জঙ্গলাবৃত এই টিলারই এক প্রান্তে রয়েছেন দেবী নলাটেশ্বরী। ৫১ পীঠের অন্যতম বীরভূমের নলহাটির নলাটেশ্বরী (Birbhum Nalhati Nalateshwari Satipith)। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, এখানে সতীর গলার নলি বা কন্ঠনালী পড়েছিল। এখানে প্রতিষ্ঠিত দেবীর নাম শেফালিকা। ভৈরব হলেন যোগীশ।


সতীপীঠেরই একটি পীঠ বীরভূমের নলাটেশ্বরী মন্দির। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, এখানে সতীর নলি বা কন্ঠনালী পড়েছিল। এরপর মায়ের আদেশেই ব্রাহ্মণী নদীর তীরে ললাট পাহাড়ের নিচে দেবী নলাটেশ্বরীর মন্দির স্থাপন করা হয়।


কথিত আছে, বিষ্ণুচক্রে যে ৫১ খণ্ড হয়েছিল, তার একটি খণ্ড বীরভূম জেলার নলহাটি শহরে ব্রাহ্মণী নদীর এক কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের পূর্ব ও দক্ষিণ কোণে পড়েছিল। মা স্বপ্ন দিয়েছিলেন, এখান থেকে ৩ কিলোমিটার দূরের নিবাসী সুখদেবকে। সুখদেবের নাম ছিল- রামশরন দেবশর্মা পণ্ডা। তিনি এখানে এসে গভীর জঙ্গলের মধ্যে মা-কে দেখতে পান। তখন মায়ের কোনও কিছু ছিল না। শুধুমাত্র, একটি ঝর্নার জলে ঝর্না ঝরত। সেই ঝর্নার জল নিয়ে এসে উনি মা-কে এখানে স্নান করান। তারপর প্রতিদিন তিনি এখানে গভীর জঙ্গলে মায়ের পুজো করতেন। পরে হেঁটে বাড়ি চলে যেতেন। প্রায় ৫০০ বছর আগের কথা এসব। কেউ কেউ বলেন, ২৫২ বঙ্গাব্দে ব্রহ্মচারী কামদেব স্বপ্নাদেশে কাশী থেকে এসে এই পীঠস্থানটি আবিষ্কার করেন। 


মা এখানে ত্রিনয়নী। মন্দিরের ভেতরে দেবীর দেহাংশ রক্ষিত আছে। এখানে প্রত্যেক দিন দেবীকে স্নান করিয়ে মঙ্গল আরতি দেওয়ার আগে দেবীর প্রস্তরীভূত অঙ্গ ভক্তদের দর্শন করানো হয়। কালী পুজোর দিন এখানে মায়ের বিশেষ পুজো হয়। 


কথিত আছে, একটি পাখির মুখ থেকে বটবৃক্ষের একটা বীচ সেখানে পড়ে চারা গাছ শুরু হয়। তার পর সেটা বাড়তে থাকে। মা-কে আড়াল করে, ছায়া করে রেখেছিল। তখন, মধুমাছির চাক থেকে মায়ের নলিতে এক ফোঁটা করে মধু পড়ত। সেটাই মায়ের আহার ছিল। তারপর নাটোরের রানি ভবানী এই মন্দির তৈরি করেন। তখন থেকে এখন পর্যন্ত নিত্যভোগ হয়। মায়ের মহিমা অসীম এবং ভক্তরা যে যে জন্য মা-কে ডাকেন, মা তাঁদের সেইমতো মনোবাসনা পূর্ণ করেন। কেউ এই মন্দির চত্বরে শুয়ে থাকলে, গভীর রাতে মায়ের নূপুরের আওয়াজ শুনতে পাবেন এখনও।


অমাবস্যায় গভীর রাতে মায়ের পুজো হয়। ডাকের সাজ দিয়ে মা-কে সাজানো হয়। মায়ের ভোগ প্রসাদ হিসেবে খিচুড়ি সঙ্গে থাকে পাঁচরকমের ভাজা। আরতি হওয়া ছাড়াও নিশি রাতে মায়ের পুজো হয় নলাটেশ্বরী মন্দিরে।


কথিত আছে, ভৈরব মন্দির স্থাপনের সময়, মাটির নীচ থেকে উঠে এসেছিল শ্রীবিষ্ণুর পদচিহ্ন আঁকা শিলাখণ্ড ! আজও দেবী ও ভৈরবের আগে প্রতিদিন এই শিলাখণ্ডের পুজো হয়।