কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: বর্ধমানে দাস বাড়ির দুর্গাপুজোয় মহাঅষ্টমীর সন্ধিপুজোয় ওড়ে শঙ্খচীল। অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে ও বিসর্জনের সময় আকাশে ওড়ে শঙ্খচিল। বর্ধমানের খাজা আনোয়ার বেড়ে জমিদার বাড়ির ১৫০ বছরের পুরনো পুজো।
একসময় বর্ধমানের খাজা আনোয়ার বেড়ের জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে আসতেন খোদ বর্ধমানের মহারাজা আর তাঁর পরিবারের সদস্যরা। বর্ধমান শহরের খাজা আনোয়ার বেড় এলাকার দাসবাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় ১৫০ বেশি সময় ধরে হয়ে আসছে। দাসবাড়ির পুজোর প্রচলন করেছিলেন তৎকালীন জমিদার মাখনলাল দাস।কিন্তু মাখনলাল দাসের সময়ে ঘটে পুজো হতো,মুর্তি পুজো হতো না।পরবর্তী কালে মাখনলালের পুত্র বজেন্দ্র লাল দাস স্বপ্নাদেশ পেয়ে মূর্তি পুজো শুরু করেন।
ব্রজেন্দ্রলাল দাসের নাতি শিবশঙ্কর দাস জানিয়েছেন, ব্রজেন্দ্রলাল দাসকে দেবী স্বপ্নে দেখা দিয়ে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার কথা বলেন। আর সেই বছর থেকেই মা দুর্গার মুর্তি পুজোর প্রচলন হয়ে যায় আনোয়ার বেড়ের জমিদার পরিবারে। স্বপ্নাদেশ মোতাবেক তৈরি হয় মূর্তিও। একচালার কাঠামোয় বসে থাকা দেবীর ডান পাশে বসে আছেন দেবাদিদেব মহাদেব। শিব-পার্বতীর দুপাশে লক্ষ্মী আর সরস্বতী বসে। তাঁদের নিচে বসে কার্তিক আর গণেশ। দেবী এখানে মহিষাসুরমর্দিনী নয়, দাস পরিবারে হয় হরগৌরীর আরাধনা।
শিবশঙ্করবাবু জানিয়েছেন, জমিদার ব্রজেন্দ্রলাল দাসের কোনও পুত্র সন্তান ছিল না। এই হতাশাই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল বর্ধমানের খাজা আনোয়ার বেড় এলাকার দাপুটে জমিদার তথা বর্ধমানের মহারাজার বিশিষ্ট বন্ধু ব্রজেন্দ্রলাল দাসকে। কথিত আছে দেবীর সেই স্বপ্নাদেশের পর মহাসমারোহে হরগৌরী মূর্তি তৈরি করে পুজোর পরই ব্রজেন্দ্রলাল দাস পুত্রলাভ করেন। দেবীর স্বপ্নাদেশে পাওয়া বলে একমাত্র পুত্রের নাম রাখেন দুর্গাচরণ দাস।
শিবশঙ্করবাবু জানিয়েছেন, তখন জমিদারি ছিল। পুজোর জাঁকজমক আর জৌলুসও ছিল নজরকাড়া। ব্রজেন্দ্রলালবাবুর আমল থেকেই দাসবাড়ির দুর্গাপুজো হয়ে আসছে পঞ্চমী থেকে। পঞ্চমীতে বোধনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু পুজো। আগে পুজো উপলক্ষ্যে দরদালানে নিয়ম করে বসত যাত্রাপালা, গানের আসর। দুর্গামণ্ডপ লাগোয়া দোতলার ঘর থেকে অন্দরমহলের মহিলারা তা উপভোগ করতেন। দাসবাড়ির পুজোর বিশেষত্ব বলতে কাঁঠালী কলা, নারকেলের বিভিন্ন মিষ্টি আর গাওয়া ঘি-এর লুচি। প্রত্যেকদিনই দেবীর কাছে এই ভোগ নিবেদন করা হয়। আগে সন্ধিপুজোর সময় ছাগ বলি হলেও,৮০ বছর আগে তা বন্ধ হয়ে গেছে। ছাগের বদলে জমিদার বাড়িতে হয় মণ্ডা বলি।
আরও পড়ুন, রাতে কে হেঁটে বেড়ায় নুপূর পায়ে ? অলৌকিক ঘটনা হুগলির ২৯৩ বছরের প্রাচীন জমিদার বাড়ির পুজোয়
শিবশঙ্করবাবুর দাবি, অষ্টমীর দিন সন্ধিক্ষণে এখনও দুর্গামণ্ডপের উপর শঙ্খচিল উড়তে দেখা যায়। দশমীর দিন দেবীকে বিসর্জন করা হয় পাশের মল্লিকপুকুরে। তখনও আকাশে ওড়ে শঙ্খচিল। তবে জমিদার দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়লেও,পুজোর আগের মতো জৌলুস না থাকলেও আচার আচরণ মেনে জাঁক জমক ভাবেই আজও হয়ে চলেছে দাস বাড়ির দুর্গা পুজো।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।