কলকাতা: ভারতবর্ষে অন্যান্য দেবদেবীদের পুজোর আগে বিধিমতে পূজিত হন বিনায়ক। শিব পুরাণের প্রাপ্ত কাহিনী অনুসারে কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থ তিথিতে গণেশের জন্ম। গণেশের কৃপাদৃষ্টি লাভের জন্য শিবপুরাণেই প্রতি বছর এই চতুর্থীতে ব্রত পালন করতে বলা হয়ে থাকে। 


গণেশের নামকরণ


‘গণ’ বলত মলূত শিব-মহাদেবের অনুচর- প্রমথদের বোঝানো হয়। আর গণেশ হলেন তিনিই, যিনি এই প্রমথবর্গের মধ্যে মুখ্য, প্রমথগণের অধিপতি, অধীশ্বর। সেক্ষেত্রে গোড়াতেই জানিয়ে রাখা ভালো যে, শিব- পার্বতীর যে গজানন পুত্র, যাঁকে আমরা সমস্ত দেবতাদের মধ্যে অগ্রপূজার অধিকারী, বিঘ্নেশ্বর গণেশ নামে চিনি, তাঁর জন্মকালীন নাম কিন্তু গণেশ ছিল না। "গণেশ" নাম এবং সমতুল্য মর্যাদা সমস্ত কিছুই তিনি পরে লাভ করেছিলেন। 


কেন সর্বাগ্রে গণেশের পুজো করা হয়? 


ওঁ শ্রী গণেশায় নমঃ’ বা ‘ওঁ গাং গণেশায় নমঃ ওঁ শ্রী গণেশায় নমঃ’ বা ‘ওঁ গাং গণেশায় নমঃ- এই মন্ত্রেই সব দেবতার আগে গণেশের পুজো করা হয়। পার্বতীর ইচ্ছা অনুযায়ী দেবতারা গণেশকে দেবতাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং অগ্রপূজার অধিকারী বলে ঘোষণা করলেন। মহাদেবও ঘোষণা করলেন যে, শিবের যাঁরা অনুচর বা গণ তাদের অধিপতিও এখন থেকে পার্বতীপুত্রই। গণের অধিপতি হিসেবেই তিনি প্রসিদ্ধ হলেন গণেশ নামে। এছাড়াও শিব তাঁকে বর দিলেন--তুমি আজ থেকে বিঘ্নহর্তা নামেও প্রসিদ্ধ হবে। সমস্ত দেবতাদের আসরে উপহারে পূজা বদনায় কৈলাসে একরকম উৎসবের বাতাবরণ তৈরি হল। আর সেই দিন থেকেই অগ্রপূজার অধিকারী রূপে অধিষ্ঠিত হলেন শিব পার্বতীর পুত্র বিঘ্নহর্তা গজানন গণেশ।


পুরাণের কাহিনী


বরাহ পুরাণ থেকে জানতে পারা যায়, একসময় সমস্ত জগৎ থেকে যাতে অন্যান্য পাপ-বিঘ্ন ইত্যাদি দেবতারা ভগবান শিবের শরণাপন্ন হলেন। ভগবান শিব তাঁদের অনুরোধ শুনে চিন্তা করতে লাগলেন। এই সময় উমা পার্বতীর মুখমণ্ডলে মহাদের নির্দিষ নয়নে উমাকে নিরীক্ষণ করতে লাগলেন। এক দৃষ্টিতে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে শিব ভাবলেন- পঞ্চা অগ্নি, বায়ু সব কিছুরই মূর্তি দেখা যাচ্ছে, কিন্তু আকাশ বা ব্যোমের কোনো আকার নেই কেন? হঠাৎই এমন ভাবনা মাথায় আসতে চিন্তার মহাদেব আপনমনেই হেসে উঠলেন। সেই হাসি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর তেজস্বী বালকের জন্ম হল। বালকের রূপে সকলেই মুগ্ধ হল, পার্বতীও তাঁর দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে রইলেন। 


সেই বালকের দিকে তাকাতে দেখে শিব বলেন, তাঁর ধারণা হল বালকের রূপ পার্বতীর চিত্তচাঞ্চল্যের কা হয়ে উঠেছে। ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি সেই বালককে অভিশাপ দিলেন- তুমি আজ থেকে গজনু হও তোমার উদর লম্বিত হোক। মহাদেবের ক্রোধকম্পিত দেহ থেকে সেই সময় অসংখ্য গজমুখ, অস্ত্রধারী বিনায়কের উৎপত্তি হল। বোধ শান্ত হবার পর ভগবান শিব ভাবতে লাগলেন—এই বিপুল সংখ্যক বিনায়ক সৃষ্টির কোন কাজে আসবে। তারপর সাগ্রহে সেই পূর্বে সৃষ্ট বালককে তিনি নিজের পুত্র বলে গ্রহণ করলেন এবং তাঁকে এই সমস্ত বিঘ্ননাশক বিনায়কদের অধিপতিপদে প্রতিষ্ঠিত করলেন। সমস্ত জগতের পাপ-বিঘ্ন অন্যায় দূর করার দায়িত্ব তাঁর উপর ন্যস্ত করলেন দেবতারা। শিবের পুত্র বিঘ্নেশ্বর গণেশ নামে প্রসিদ্ধ হলেন।


আরও পড়ুন, রাবণের লঙ্কাপুরী-পুষ্পক রথ নির্মাতা বিশ্বকর্মা, কৃষ্ণের দ্বারকাও তৈরি দেবশিল্পীর হাতেই