কলকাতা: সনাতন ধর্মাবলম্বীরা গীতাকে (Gita) ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী মনে করেন। মানবধর্ম, দর্শন ও সাহিত্যের ইতিহাসে গীতা এক বিশেষ স্থানের অধিকারী। গীতা-র কথক শ্রীকৃষ্ণকে হিন্দুরা ভগবানরূপে পুজো করেন। স্বয়ং গীতায় শ্রীকৃষ্ণকে ‘শ্রীভগবান’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রাচীন সংস্কৃত এর একটি অংশ মহাভারত। গীতা একটি স্বতন্ত্র ধর্মগ্রন্থ তথা একটি পৃথক শাস্ত্র এর মর্যাদা পেয়ে থাকে। (Religion) 


গীতার দশমোধ্যায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে (Arjun) নিজের বিশ্বরূপ দর্শন করিয়েছিলেন। কীভাবে পরমাত্মাকে পাওয়া যায়, সেই ব্যাখাও দিয়েছিলেন তিনি। দশমোধ্যায়ের তৃতীয় শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন-


যো মামজমনাদিঞ্চ বেত্তি লোকমহেশ্বরম্।
অসম্মূঢ়ঃ স মর্ত্যেষু সর্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে৷৷


অর্থাৎ- যিনি আমাকে অজ অর্থাৎ জন্মরহিত, অনাদি এবং সর্বলোকের মহেশ্বর বলে তত্ত্বতঃ জানেন, মনুষ্য মধ্যে জ্ঞানবান সেই ব্যক্তি সর্বপাপ থেকে মুক্ত হন। শ্রীকৃষ্ণ বলে গিয়েছিলেন, ভগবান তাঁর যোগমায়ার মাধ্যমে জন্মরহিত। অন্য জীবেদের ন্যায় তাঁর জন্ম হয় না। 


কৃষ্ণের কথায়, ভগবানই সবাকার আদি অর্থাৎ মহাকারণ। তাঁর আদি কেউ নেই। তিনি নিত্য এবং সদাই অবস্থিত। অন্য পদার্থের মতো কোনও কালবিশেষে তাঁর আরম্ভ হয়নি। এই কথা শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের সঙ্গে ভালোভাবে বোঝাই হল ‘ভগবানকে অনাদি বলে জানা'। ঈশ্বরবাচ্য যত ইন্দ্র, বরুণ, যম, প্রজাপতি ইত্যাদি লোকপাল আছেন—ভগবান তাঁদের সকলের মহেশ্বর ; তিনিই সবাকার নিয়ন্তা, প্রেরক, হর্তা, কর্তা, সর্বপ্রকারে সকলের ভরণ-পোষণ ও সংরক্ষণকারী সর্বশক্তিমান পরমেশ্বর। 


ভগবানকে উপরোক্ত প্রকারে জন্মরহিত, অনাদি ও লোকমহেশ্বর জানার ফলরূপে এরূপ বলা হয়েছে। অর্থাৎ জগতের সব মানুষের মধ্যে যিনি উপরোক্ত প্রকারে ভগবানের প্রভাব ঠিকভাবে জানেন, তিনিই প্রকৃতপক্ষে ভগবানকে জানেন এবং যিনি ভগবানকে জানেন, তিনিই ‘অসম্মূঢ়' ; বাকি সকলেই সম্মূঢ়। এবং যিনি ভগবানকে তত্ত্বতঃ সঠিকভাবে জেনে নেন, তিনি স্বাভাবিকভাবেই তাঁর জীবনের অমূল্য সময় সর্বপ্রকারে নিরন্তর ভগবানের ভজনে নিয়োজিত করেন। বিষয়ী ব্যক্তিদের ন্যায় ভোগকে সুখের কারণ ভেবে তাতে আবদ্ধ হন না। তাই তিনি ইহজন্ম ও পূর্বজন্মের সর্বপ্রকার পাপ থেকে সর্বতোভাবে মুক্ত হয়ে | সহজেই পরমাত্মাকে লাভ করেন।


হিন্দুরা গীতা-কে ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী মনে করেন। গীতা-র কথক কৃষ্ণ হিন্দুদের দৃষ্টিতে ঈশ্বরের অবতার পরমাত্মা স্বয়ং। তাই গীতা-য় তাকে বলা হয়েছে “শ্রীভগবান”। গীতা-কে গীতোপনিষদ বলা হয়। ভগবদ্গীতার রচনাকাল সম্বন্ধে অনেক রকম মতামত রয়েছে। ঐতিহাসিকেরা এই গ্রন্থের রচনাকাল হিসেবে খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত যে কোন সময়ের মধ্যে হতে পারে বলে অনুমান করেছেন।


আর পড়ুন, কেন যুগে যুগে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন কৃষ্ণ? জন্মাষ্টমীতে পড়ুন গীতায় উল্লিখিত ভগবানের জন্মবৃত্তান্ত



( তথ্যসূত্র : শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী), গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর )