কলকাতা: হিন্দুরা গীতা-কে ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী মনে করেন। গীতা-র কথক কৃষ্ণ হিন্দুদের দৃষ্টিতে ঈশ্বরের অবতার পরমাত্মা স্বয়ং। তাই গীতা-য় তাকে বলা হয়েছে “শ্রীভগবান”। গীতা-কে গীতোপনিষদ বলা হয়। ভগবদ্গীতার রচনাকাল সম্বন্ধে অনেক রকম মতামত রয়েছে। ঐতিহাসিকেরা এই গ্রন্থের রচনাকাল হিসেবে খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত যে কোন সময়ের মধ্যে হতে পারে বলে অনুমান করেছেন।


সনাতন ধর্মাবলম্বীরা গীতাকে ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী মনে করেন। মানবধর্ম, দর্শন ও সাহিত্যের ইতিহাসে গীতা এক বিশেষ স্থানের অধিকারী। গীতা-র কথক শ্রীকৃষ্ণকে হিন্দুরা ভগবানরূপে পুজো করেন। স্বয়ং গীতায় শ্রীকৃষ্ণকে ‘শ্রীভগবান’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রাচীন সংস্কৃত এর একটি অংশ মহাভারত। গীতা একটি স্বতন্ত্র ধর্মগ্রন্থ তথা একটি পৃথক শাস্ত্র এর মর্যাদা পেয়ে থাকে।


গীতায় বলা হয়েছে- 


ক্রোধাদ্ভবতি সম্মোহঃ সম্মোহাৎ স্মৃতিবিভ্রমঃ। 
স্মৃতিভ্রংশাদ্ বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাৎ প্রণশ্যতি।। 



ক্রোধ থেকে মূঢ়ভাব উৎপন্ন হয়, মূঢ়ভাব থেকে স্মৃতিভ্রংশ হয়, স্মৃতিভ্রংশে বুদ্ধিনাশ বা জ্ঞানশক্তির নাশ এবং বুদ্ধিনাশ হলে সেই ব্যক্তি নিজ স্থিতি থেকে পতিত হয়।।


ক্রোধ থেকে উৎপন্ন অত্যন্ত মূঢ়ভাবের স্বরূপ, কী ? চিন্তা-ভাবনা এমনভাবে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায় যে তার কোনো কথারই আর ঠিক থাকে না। একেই সম্মোহ থেকে স্মৃতিবিভ্রম বলা হয়।


স্মৃতিবিভ্রমের মাধ্যমে বুদ্ধিনাশ হওয়া এবং বুদ্ধি- নাশের দ্বারা নিজ স্থিতি থেকে পতিত হওয়া কাকে বলে ?


মানুষের হৃদয়ে যখন ক্রোধের বৃত্তি জাগ্রত হয়, সেই সময় তার চিত্তে বিবেক-শক্তি থাকে না। সে তখন অগ্র-পশ্চাৎ কিছু ভাবতে পারে না, ক্রোধবশে যে কার্যে সে প্রবৃত্ত হয়, তার পরিণামের দিকে তার কোনো খেয়াল থাকে না। একেই বলা হয় ক্রোধ থেকে উৎপন্ন সম্মোহ অর্থাৎ অত্যন্ত মূঢ়ভাব।



বিহায় কামান্ যঃ সর্বান্ পুমাংশ্চরতি নিঃস্পৃহঃ।
নিৰ্মমো নিরহঙ্কারঃ স শান্তিমধিগচ্ছতি৷৷ 


যে ব্যক্তি সমস্ত কামনা পরিত্যাগ করে মমতাবর্জিত, অহংকাররহিত এবং নিস্পৃহ হয়ে বিচরণ করেন, তিনিই পরম শান্তি লাভ করেন॥


কোনো অনুকূল বস্তু না পেলে মনে যখন এরূপ ভাব হয় যে ঐ বস্তুটির প্রয়োজনীয়তা আছে, সেটি না পেলে চলবে না, এই আকাঙ্ক্ষার নাম স্পৃহা, সেই আকাঙ্ক্ষার থেকে সর্বতোভাবে রহিত হয়ে যাওয়াই হল ‘নিঃস্পৃহ’ অর্থাৎ স্পৃহারহিত হওয়া। কামনার সূক্ষ্মরূপ হল স্পৃহা, তাই সমস্ত কামনা ত্যাগের থেকে এই ত্যাগকে পৃথক বলা হয়েছে।


আরও পড়ুন, 'ভক্ত যেভাবে ভজনা করবে, আমিও সেভাবে তাঁর পাশে থাকব', গীতায় ঈশ্বর ভজনের পাঠ দিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ


( তথ্যসূত্র : শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী), গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর )