ভগবদ্গীতার (Bhagvad Gita) প্রতিটি শ্লোকে জীবনে অনেক জটিল প্রশ্নের সমাধানের কথা বলা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্থ অর্জুনকে বিভিন্নভাবে পথ দেখিয়েছেন অর্জুন। জীবনের প্রকৃত রূপ দর্শন করিয়েছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। দ্বিতীয় অধ্যায়, সাংখ্যযোগে অর্জুন তাঁর শোক নিবৃত্তির ঐকান্তিক উপায়  জানতে চান। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ (Lord Krishna) এই অধ্যায়ের ত্রিশতম শ্লোক পর্যন্ত আত্মতত্ত্ব বর্ণনা করেছেন। অধ্যায়ের ১১ নম্বর শ্লোকে ভগবান বলেছেন, (Bhagvad Gita Quotes) 


অশোচ্যানন্বশোচত্বং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে|
গতানগতাসূংশ্চ নানুশোচন্তি  পণ্ডিতাঃ৷৷ ১১ 

এর অর্থ কী ? ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন এখানে  অর্জুনকে বললেন,  যাঁদের জন্য তোমার শোক করা উচিত নয়, তাদের জন্য তুমি শোক করছ আবার পণ্ডিতের মতো কথা বলছ। মৃত বা জীবিত, পণ্ডিতরা কারও জন্যই শোক করে না। প্রথম অধ্যায়ে তৃতীয় পাণ্ডবের মুখে বারবার শোকপ্রকাশ পেয়েছে। তাঁর সামনে যখন যুদ্ধক্ষেত্রে হাজির হয়েছেন বন্ধু-বান্ধব, আচার্য, পিতৃপুরুষেরা , ততই ভেঙে পড়েছেন অর্জুন। তখনই শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে বলেছেন, যাঁদের জন্য শোক করা উচিত নয়, তুমি তাঁদের জন্য শোক করছ।'


নিজের হাতে নিজের পরিবারের মানুষকে মেরে ফেলার আগে হাত কেঁপেছে তাঁর। তিনি  কুলনাশ দ্বারা উৎপন্ন মহাপাপের আশঙ্কা করেছেন। সেই সময় তাঁকে পথ দেখিয়েছেন শ্রীকৃষ্ণ। বলেছেন, এই  বিষয়ে জ্ঞানীরা কখনও শোক করেন না।  শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী) অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ বলতে চেয়েছেন 'পণ্ডিতদের দৃষ্টিতে একমাত্র সচ্চিদানন্দঘন ব্রহ্মই নিত্য ও সৎ বস্তু, তাঁর থেকে ভিন্ন কোনও বস্তুই নেই, তিনি সকলের আত্মা, তাঁর কখনও কোনও প্রকার বিনাশ হতে পারে না। ' 


ভগবার তাঁকে বুঝিয়েছেন, শরীর অনিত্য, সর্বদা তা থাকা সম্ভব নয়।  আত্মা এক শরীরের  ত্যাগ করে অন্য শরীরে প্রবেশ করে।  আর তা অনিবার্য । তাই  কার জন্য, কী জন্য শোক করবেন ? তাই এর পরবর্তী শ্লোকেও কৃষ্ণ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, 'তুমি যাঁদের বিনাশের আশঙ্কা করছ, তাঁদের সকলের এবং তোমার-আমার কখনো কোনো কালে বিনাশ নেই। বর্তমান শরীরের উৎপত্তির আগেও আমরা ছিলাম, পরেও থাকব। শরীর নাশ হলেও আত্মার বিনাশ হয় না, অতএব বিনাশের আশঙ্কায় এঁদের সকলের জন্য শোক করা উচিত নয়।'  (শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী) )


ন ত্বেবাহং জাতু নাসং ন ত্বং নেমে জনাধিপাঃ। 

ন চৈব ন ভবিষ্যামঃ সর্বে বয়মতঃপরম্।।১২।। 

 

শ্রীকৃষ্ণ এখানে বলতে চেয়েছেন,  এমন কোনও সময় ছিল না যখন আমি, তুমি ও এই সমস্ত রাজারা ছিলেন না এবং ভবিষ্যতেও কখনও আমাদের অস্তিত্ব বিনষ্ট হবে না। এখানে আত্মার অবিনশ্বরতার কথাই বলা হয়েছে।