গীতার (Gita quotes) প্রতিটি অধ্যায়ে মার্গদর্শন করিয়েছেন শ্রীকৃষ্ণ। ভগবদ্গীতার তৃতীয় অধ্যায় কর্মযোগের শুরুতে পার্থ শ্রী কৃষ্ণের (Lord Krishna) কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, 'হে জনার্দন! হে কেশব! যদি আপনার মতে কর্ম অপেক্ষা ভক্তি-বিষয়িনী বুদ্ধি শ্রেয়তর হয়, তাহলে এই ভয়ানক যুদ্ধে আমায় নিযুক্ত হওয়ার জন্য কেন পরামর্শ দিচ্ছেন? অর্জুন (Arjun) বলেন, ভগবানের কথা তাঁর কাছে দ্ব্যর্থবোধক ঠেকছে। তিনি  বিভ্রান্ত হচ্ছেন।  তাই, তিনি তাঁর জন্য শ্রেয় পথটি জানতে চান শ্রীকৃষ্ণের কাছে ।


জ্যায়সী চেৎ কর্মণস্তে মতা বুদ্ধির্জনার্দন।

তৎ কিং কর্মণি ঘোরে মাং নিয়োজয়সি কেশব।। 

এর উত্তরে ভগবান বিভিন্ন ভাবে অর্জুনকে তাঁর কর্তব্য বুঝিয়েছেন। গীতায় এই অধ্যায়ই কর্মযোগ। এই অধ্যায়ের ৮ নম্বর শ্লোকে ভগবান বলেছেন,


নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং কর্ম জ্যায়ো হ্যকর্মণঃ।

শরীরযাত্রাপি Б ন প্ৰসিদ্ধ্যেদকর্মণঃ ৷৷ ৮ 


পার্থসারথি, তৃতীয় পাণ্ডবকে পরামর্শ দেন, শাস্ত্রবিহিত কর্তব্যকর্ম করো । কারণ কর্ম না করার থেকে কর্ম করা শ্রেয়ঃ। কর্ম না করে তোমার শরীর নির্বাহও হবে না ।  

আরও পড়ুন  :


'ভক্ত যেভাবে ভজনা করবে, আমিও সেভাবে তাঁর পাশে থাকব', গীতায় ঈশ্বর ভজনের পাঠ দিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ


শ্রীকৃষ্ণ এখানে বলতে চেয়েছেন, বর্ণ, আশ্রম, স্বভাব অনুসারে প্রত্যেক মানুষের শাস্ত্রে নির্দিষ্ট কর্তব্যের কথা বলা রয়েছে। সেই সব কাজ করে যাওয়াই পণ্ডিত মানুষের কর্তব্য। তাই অর্জুনকে তাঁর শাস্ত্রবিহিত ক্ষত্রিয় ধর্ম পালন করতে হবে। (religion) 
অর্জুনকে তাঁর স্বধর্ম  পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে যুদ্ধ করা তাঁর স্বধর্ম, তাই তা হিংসাত্মক ও ক্রুরতাপূর্ণ মনে হলেও, যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। বরং নিষ্কামভাবে যুদ্ধ করলে, তা অর্জুনের পক্ষে কল্যাণকরই হবে। তাই অর্জুন সংশয় ত্যাগ করে যুদ্ধ করতে পারেন। সেটাই তাঁর কর্তব্য। ভগবান গীতায় বুঝিয়েছেন, যাঁর যা কর্তব্য, তা করতে হবে। কর্ম করলে মানুষের অন্তঃকরণ শুদ্ধ হয় । সেই সঙ্গে কৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়। যাঁরা কাজ করেন না, তাঁরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অলস হয়ে পড়েন । শেষমেষ ভুল পথে গিয়ে খারাপ গতি প্রাপ্ত হয় ।  

 

এছাড়া ভগবান বোঝাতে চেয়েছেন কর্মকে  সর্বতোভাবে পরিত্যাগ করে মানুষ জীবিত থাকতে পারে না। শরীর নির্বাহের জন্য তাকে কিছু না কিছু করতেই হবে। তাই  কর্ম না করার থেকে কর্ম করাই শ্রেয়। 

( তথ্যসূত্র : শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী), গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর )