কলকাতা : আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিকে বলা হয় গুরু পূর্ণিমা (Guru Purnima 2024)। এই পূর্ণিমাটি হচ্ছে মহাভারতকার কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসের জন্মতিথি। তিনি অষ্টাদশ পুরাণ রচনা করেছিলেন। বেদ অখণ্ড ছিল। সেটাকে ব্যাস ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব...এই চারটি ভাগে বিভক্ত করেছিলেন। তাই তাঁর নাম বেদব্যাস। এই বেদব্যাসের আবির্ভাব তিথি হল এই আষাঢ়ি পূর্ণিমা। তাই গুরু পূর্ণিমাকে আমরা ব্যাস পূর্ণিমাও বলি।এমনই বলছেন বিশিষ্ট শাস্ত্রীয় পণ্ডিত তথা সর্বভারতীয় প্রাচ্যবিদ্যা অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ ডক্টর জয়ন্ত কুশারী (Jayanta Kushary)। 


এই দিনটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে গুরু হিসাবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যাসদেবকে আদিগুরু বলা হল কেন ? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে জানা যাক, দীক্ষা শব্দের অর্থ কী ? যিনি আমাদের বিমল জ্ঞান দেন, যে জ্ঞানের মধ্যে কোনও পঙ্কিলতা নেই, সেই জ্ঞান দেন এবং আমাদের পাপ রাশিকে যিনি একেবারে ক্ষীণ করে দেন, পাপ রাশিকে ক্ষয় করে পুণ্যে ভরপুর করে দেন এবং বিমল জ্ঞান দেন, সেখানেই সম্পন্ন হয় দীক্ষা। বা, এটাই দীক্ষা শব্দের অর্থ। সেই কাজটা যিনি করবেন, তিনিই গুরু। সেই কাজটা করেছিলেন আদিগুরু ব্যাসদেব।


ব্যাসদেব আমাদের কী শিক্ষা দিলেছিলেন ?


এই যে চার রকমের বেদ, অষ্টাদশ পুরাণ , মহাভারত রচনা হল তার সারমর্ম কী ? এই প্রশ্নে ব্যাসদেব মাত্র দু'টো কথা বলেছিলেন। সেটাই একটা গুরুর আসল লক্ষণ। তিনি অষ্টাদশ পুরাণে দু'টো কথা বলেছেন। অর্থাৎ, ১৮টি পুরাণের মূল বক্তব্য দু'টো কথা। এক, পর বা অন্যের উপকার করা হচ্ছে পুণ্য কাজ। দুই, অন্যকে পীড়ন বা শোষণ করা, অন্যকে ধর্ষণ করা বা দুর্ব্যবহার..এগুলো হচ্ছে পাপ। অতীতে ব্যাসদেব যেটা বলে গিয়েছেন সেটা আজও প্রাসঙ্গিক। আগামী প্রজন্মের জন্যও এর বাস্তবতা বা যুক্তি কেউ খণ্ডন করতে পারবে না। যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে তাঁর দুই কথা। এক হচ্ছে, অন্যের উপকার করা পুণ্য। অন্যকে পীড়ন করা পাপ। এভাবে তিনি আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন। দীক্ষা দিয়েছেন। তাঁর মতে, উপরের দুই পথ মেনে চললে গোটা পৃথিবীটা একটা শান্তির পারাবার হয়ে যাবে। এই কারণেই তাঁর জন্মতিথি অর্থাৎ আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিটাকে সনাতম ধর্মের শাস্ত্রকাররা গুরু পূর্ণিমা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এই দিনটি একযোগে ব্যাস পূর্ণিমা, আষাঢ়ি পূর্ণিমা ও গুরু পূর্ণিমা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 


শাস্ত্রের এই কথা পরবর্তীকালে বাউল পদকর্তার অনুভবেও এসেছে। যে, গুরু ছাড়া জগতে কেউ নেই। আপনাকে যিনি ইষ্ট দর্শন করালেন, আপনি যে গুরুমন্ত্র বা ইষ্টমন্ত্র পেলেন, একাজের জন্য মাঝে একজন আছেন। কেউ সরাসরি তাঁর ইষ্ট বা আরাধ্যাকে পান না। উপাস্যের সঙ্গে যিনি সাক্ষাৎ করান তিনিই গুরু। কেউ সরাসরি তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারেন না। গুরু ছাড়া জগতে আর কেউ নেই। একজনকেই ধরে থাকলে পৃথিবীতে সবকিছু পাওয়া যায়। সবথেকে বড় কথা, শান্তি পাওয়া যায়। তিনি হলেন গুরু। তাই গুরু পূর্ণিমার এত মাহাত্ম্য। 


গুরু পূর্ণিমায় কী করতে হয় ?


এই দিনটায় গুরুর সাক্ষাৎ পেলে তাঁর পুজো করতে হবে। নাহলে তাঁর পটচিত্রে পুজো করতে হবে। এই দিনটাতে নিরামিষ খেতে হয়। পারলে, এই দিনটায় অন্নগ্রহণ না করা ভাল। লুচি, পরোটা, ডালিয়া বা সামা চাল ...অর্থাৎ চাল বর্জন করে যে খাদ্য নেওয়া যাবে সেগুলোই খেতে হবে। গুরুকে সম্মান প্রদানের জন্য এই দিনটায় অন্ন গ্রহণ করা যাবে না। যেটা খেতে ইচ্ছা করবে, সেটা গুরুকে নিবেদন করে খেতে হবে। ফল, মিষ্টি, রাবড়ি, দই তো আছেই। কিন্তু, এর সঙ্গে যদি ভোগ লাগিয়ে দেওয়া যায়...যেমন সুজির পায়েস, ডালিয়ার খিচুড়ি বা সামা চালের ভাত, কিংবা লুচি-পরোটা নিবেদন করতে হবে। আরতি, গুরুবন্দনা করতে হবে। সম্ভব হলে, গুরু গীতা পড়তে হবে। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।