সোমনাথ মিত্র, হুগলি : শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার। ভক্তের ভিড় উপচে পড়ল তারকেশ্বর মন্দিরে। প্রায় ৩৯ কিলোমিটার পথ বাঁক কাঁধে জল নিয়ে পায়ে হেঁটে তারকেশ্বর এ পৌঁছলেন লক্ষাধিক ভক্ত। গর্ভগৃহের বাইরেই রাখা চোঙায় জল ঢেলে মনস্কামনা জানাচ্ছেন ভক্তরা। শ্রাবণী মেলাকে কেন্দ্র করে গোটা তারকেশ্বর যেন উৎসবনগরী। মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পুলিশ।
মন্দির সংলগ্ন দুধ পুকুরে টহল দিচ্ছে স্পীড বোট। দুর্ঘটনা এড়াতে মন্দির চত্বরে রয়েছে অগ্নিনির্বাপক ব্য়বস্থা। তারকেশ্বর স্টেশনেও চলছে রেল পুলিশের বিশেষ নজরদারি। আগামী রাখী পূর্ণিমা অবধি চলবে মেলা। ইতিমধ্যেই মেলা উপলক্ষ্যে শেওড়াফুলি গঙ্গার ঘাট, সড়ক পথ ও তারকেশ্বরের সব জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মেলা শুরুর আগেই মন্ত্রী ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
সব জায়গাতেই অতিরিক্ত পুলিশ, সিসিটিভি নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। তারকেশ্বরে ভিড় সামাল দিতে এবার কয়েকটি বিষয়ে কড়াকড়ি করা হচ্ছে। যেমন, অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের যত্রতত্র বসতে দেওয়া হচ্ছে না। দরকার হচ্ছে আগাম অনুমতির। পৌরসভার ছাড়পত্র থাকলে তবেই অস্থায়ী স্টল করা যাচ্ছে।
এই শ্রাবণে পূর্ব রেল বিশেষ দিনগুলোতে হাওড়া-তারকেশ্বর ও শেওড়াফুলি - তারকেশ্বর শাখায় অতিরিক্ত লোকাল ট্রেন চালাচ্ছে। পাশাপাশি এবার রাজ্য পরিবহন দফতর তারকেশ্বর থেকে ধর্মতলা ও তারকেশ্বর থেকে বর্ধমান অবধি বাস পরিষেবা চালু করেছে।
সোমবার ভোর থেকেই ভক্তদের লম্বা লাইন মন্দিরে। জল ঢালার পাশাপাশি ফুল, বেলপাতা অর্পন করছেন ভক্তরা। ধূপ ,মোমবাতি জ্বালিয়ে মনোবাসনা জানাচ্ছেন দেবাদিদেবের আরাধনা করছেন ভক্তরা ।
বিভিন্ন জেলা থেকে তো বটেই, ভিন রাজ্য থেকেও এসেছেন ভক্তরা। অসমের শিলচর থেকে তারকেশ্বরে মহাদেবকে পুজো দিতে এসেছেন শিক্ষিকা পাপড়ি দে । তিনি জানালেন, বহুদিনের ইচ্ছেপূরণ হওয়ায় তিনি খুব খুশি। তারকেশ্বর মন্দির পুরোহিত মণ্ডলীর সদস্য সন্দীপ চক্রবর্তী জানান, 'শ্রাবণ মাস হিন্দুদের কাছে খুব পবিত্র মাস। । কথিত আছে এটা বাবার জন্ম মাস । তাই মানুষের মধ্যে শ্রাবণ মাসের প্রভাব অপরিসীম। এবং বাবার মাথায় জল ঢালার মধ্যে দিয়ে মানুষের আধ্যাত্মিক ইচ্ছা পূরণ হয়।'
তারকেশ্বর পৌরসভার কাউন্সিলর রূপা সরকার জানান, শ্রাবণ মাসের শনিবার থেকে সোমবার সর্বদা জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব সময় আলোর ব্যবস্থা থাকছে। ভক্তদের জন্য স্বাস্থ্য ক্যাম্প আছে, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা রাখা হয়েছে। এবারে মহিলাদের জন্য অস্থায়ী শৌচাগারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মায়েদের জন্য রয়েছে ফিডিং সেন্টার । পরিবহণ দফতর ৫০টা বাড়তি বাস পরিষেবা দিচ্ছে, পাওয়া যাবে তারকেশ্বরের নতুন বাস স্ট্যান্ড থেকে।
আরও খবর :