কলকাতা : হিন্দুদের চারটি পবিত্র ধামের মধ্যে অন্যতম পুরীর জগন্নাথ মন্দির। কথিত আছে, শ্রীকৃষ্ণের হৃদয় জগন্নাথের মূর্তির মধ্যে স্পন্দিত হয়। যদিও ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সর্বত্র রাধাজির সঙ্গে দেখা যায়। অন্যদিকে জগন্নাথ তাঁর বোন সুভদ্রা ও বড় ভাই বলরামের সঙ্গে থাকেন। পুরীকে বলা হয়- মোক্ষের স্থান। পুরীতে, জগন্নাথদেব এবং দেবী বিমলার মধ্যে গভীর সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে, দেবীকে নিবেদন না করলে ভগবান জগন্নাথদেব প্রসাদের স্বাদ নেন না। 


কে পুরীর দেবী বিমলা ?


পুরীতে দেবী বিমলাকে ভগবান জগন্নাথের মতো পুজো করা হয়। দেবী বিমলাকে মাতা সতী-র(মাতা পার্বতী) আদি শক্তি রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যিনি ভগবান বিষ্ণুর বোনও। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, দেবী বিমলা হলেন পুরীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। মন্দির চত্বরেই রয়েছে বিমলা শক্তিপীঠ। ভগবান জগন্নাথকে দেওয়া পবিত্র ভোগ দেবী বিমলাকে নিবেদনের পরেই জগন্নাথ গ্রহণ করেন।


জগন্নাথ দেবের আগে কি দেবী বিমলাকে ভোগ নিবেদন করা হয় ?


সমস্ত পবিত্র স্থানের মধ্যে ভগবান জগন্নাথের নৈবেদ্য সবচেয়ে বিশেষ বলে মনে করা হয়। পুরীতে ভগবান বিষ্ণুর খাবার খাওয়ার বিশ্বাসের কারণে এখানকার 'মহাভোগ' মহাপ্রসাদ নামে বিখ্যাত। এই মহান আত্মত্যাগের একটি জনপ্রিয় কথন আছে। লক্ষ্মী নিজেই ভগবান জগন্নাথ অর্থাৎ বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য প্রস্তুত করতেন। 


নারদ মুনি এই মহাভোগ আস্বাদন করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন। অবশেষে একবার দেবী লক্ষ্মীর বর পেয়ে তিনি মহাভোগের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ পেলেন। কিন্তু দেবী লক্ষ্মী তাঁকে মহাভোগের স্বাদ নেওয়ার কথা নিজের মধ্যেই রাখতে বলেছিলেন।


মহাভোগের রহস্য-ফাঁস নারদের-


দেবর্ষি নারদ অল্প একটু প্রসাদ নিয়ে সেখান থেকে চলে যান। মহাদেব, যমরাজ, ইন্দ্র সহ সমস্ত দেবতা কৈলাসে বৈঠকের জন্য উপস্থিত ছিলেন। দেবর্ষি নারদও সেখানে পৌঁছলেন। ভুলবশত জগন্নাথজির মহাভোগ আস্বাদন করার কথা মুখ থেকে বেরিয়ে এল তাঁর। সেই অবস্থায় মহাদেবও সেই প্রসাদ ভোগ করলেন। ভোলেনাথ অন্ন গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি খুশি হয়ে তাণ্ডব করতে লাগলেন। কৈলাস দোলাতে লাগলেন। তখন দেবী পার্বতী শিবের খুশির কারণ জিজ্ঞেস করলেন এবং তিনিও মহাপ্রসাদের কথা জানতে পারলেন।


দেবী পার্বতীও ভগবান শিবের কাছ থেকে প্রসাদ আস্বাদন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু প্রসাদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এতে পার্বতীজি রেগে গিয়ে বললেন, আপনি একাই প্রসাদ খেয়েছেন। এখন এই প্রসাদ সারা বিশ্বে পাওয়া যাবে। দেবী পার্বতী ক্ষুব্ধ হয়ে শিবজির সঙ্গে জগন্নাথ ধামে তাঁর ভাইয়ের বাড়িতে পৌঁছে লক্ষ্মীজিকে বললেন, "ভাই, আমি এত দিন পর আমার মাতৃগৃহে এসেছি, আপনি কি আমাকে খাওয়াবেন না?" জগন্নাথদেব পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন। দেবী পার্বতী ক্রোধে বললেন, মহাভোগকে নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছ কেন?


তার উত্তরে জগন্নাথ ভগবান বিষ্ণু বলেছিলেন যে, দেবী লক্ষ্মীর তৈরি খাবারের প্রসাদ গ্রহণ করলে সকলেই কর্মের নীতি থেকে দূরে সরে যেতে পারে। এতে পাপ-পুণ্যের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে। তাই আমি তা সীমাবদ্ধ করে রেখেছিলাম। কিন্তু এখন আপনি বলছেন, তাই এটা আজ থেকেই সর্বজনীন করব। এখন থেকে জগন্নাথের জন্য যে মহাভোগ প্রস্তুত করা হবে, তা প্রথমে আপনাকে নিবেদন করা হবে এবং তবেই আমি তা গ্রহণ করব। দেবী, আপনি আপনার ভক্ত ও সন্তানদের পরম স্নেহ করেন, তাই আজ থেকে আপনিও বিমলা নামে জগন্নাথ ধামে অধিবাস করবেন।


ডিসক্লেমার : ধর্মীয় বিশ্বাস নিজস্ব। এ ব্যাপারে কোনও মতামত এবিপি লাইভের নেই। এবিপি লাইভ ধর্ম সম্পর্কিত কোনো সম্পাদকীয় / সম্পাদক-নিয়ন্ত্রিত তথ্য, পরামর্শ প্রদান করে না। প্রদত্ত পরামর্শ ও তথ্য প্রয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।


তথ্যসূত্র: এবিপি নিউজ