তুহিন অধিকারী, বাঁকুড়া: বাংলার নানা প্রান্তে হয় কালীপুজো। দেবী কালীর (Kali Puja 2023) পুজো ঘিরে অসংখ্য লোককথা প্রচলিত রয়েছে গোটা বাংলায়। প্রাচীন কোনও পুজো থেকে, বনেদি বাড়ির পুজো, মন্দিরের পুজো থেকে বারোয়ারি পুজো-সবই রয়েছে বাংলায়। বাংলার এমন একাধিক কালীপুজো রয়েছে যা ঘিরে অসংখ্য লোককথা প্রচলিত রয়েছে। তেমনই একটি পুজো রয়েছে বাঁকুড়ার সোনামুখীতে (Sonamukhi)। বাঁকুড়ার (Bankura) অনেক পুরনো বসতি সোনামুখী। এখন পুর এলাকা। এখানে একাধিক কালীপুজো (Kali Pujo) হয়। এখানেই রয়েছে 'মা-ই তো কালী'। ভক্তদের বিশ্বাস, এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। পুজো দিতে, পুজো দেখতে দূরদূরান্ত থেকে এখানে আসেন বহু ভক্ত। মনোকামনা পূরণ করার জন্য এখানে আসেন অনেকে। কিন্তু এমন নাম কেন? এমন নামকরণের পিছনে পুরনো জনশ্রুতি রয়েছে।
কথিত রয়েছে, ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দ বা ১১৪৯ বঙ্গাব্দ- এই সময়টা তখনকার বাংলা এলাকায় বর্গী হামলা চলছে। বর্গীদের হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছে এমন জনবসতি তখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বর্গীদের নজর ছিল সেই সময়ের সোনামুখীর উপরেও। বর্গী সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিতের নেতৃত্বে বিশাল বর্গী দল হামলা চালিয়েছিল এই এলাকায়। বিষ্ণুপুর পেরিয়ে ভাস্কর পণ্ডিতের নেতৃত্বে বিশাল বর্গী দল এসে পৌঁছেছে সোনামুখী এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে একসময়। আতঙ্ক গ্রাস করেছিল গোটা এলাকাকে। তটস্থ হয়ে নাকি কার্যত ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিলেন বাসিন্দারা। কথিত রয়েছে, সেই রকমই কোনও নিঝুম সন্ধ্যায় বর্গী সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত এসে দাঁড়িয়েছিলেন সোনামুখীর এক পর্ণ কুটিরের সামনে। সেইখানে তখন হাড়িকাঠের সামনে পুজোয় বসেছিলেন এক বৃদ্ধ। ওই বৃদ্ধকে মারতে অস্ত্র তুলে ধরতেই নাকি দৃষ্টি হারান ভাস্কর পণ্ডিত। সেই সময় নাকি তাঁর মনে হয়েছিল, তাঁর অস্ত্র কেউ পিছন থেকে টেনে রেখেছে। পিছনে দাঁড়ানো সবাইকে জিজ্ঞেস করতেই নাকি উত্তর এসেছিল কেউ অস্ত্র ধরে নেই। কিন্তু তবুও নাকি ভাস্কর পণ্ডিত অস্ত্র চালাতেই পারছিলেন না। সেই সময় নাকি ওই বৃদ্ধ মন্দিরের ঘটের জল ছিটিয়ে ভাস্কর পণ্ডিতের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে আনেন। তখন অস্ত্রও নাকি নামাতে পারেন ভাস্কর পণ্ডিত। সেই সময় নাকি ভাস্কর পণ্ডিত ওই বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন এখানে কোনও দেবস্থান আছে কিনা? বৃদ্ধ উত্তর দিয়েছিলেন, মা কালী পূজিতা হন এখানে। তখন নাকি ভাস্কর পণ্ডিত চিৎকার করে ওঠেন 'মা-ই-তো কালী'। সেই থেকেই নাকি এই কালী প্রতিমার নাম হয়ে যায় 'মা-ই-তো কালী'। এছাড়াও একই সঙ্গে এমন জনশ্রুতিও রয়েছে, ভাস্কর পণ্ডিত ওই জায়গা ছেড়ে যাওয়ার আগে নাকি ওই অস্ত্রটি বৃদ্ধের হাতে দিয়ে যান। তারপর থেকে আজও সোনামুখীর মানুষের অত্যন্ত ভরসা, বিশ্বাস আর ভক্তির অন্যতম নাম 'মা-ই-তো কালী'। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই দিনের সেই পর্ণকুটির বিশাল মন্দিরে পরিণত হয়েছে। নিত্যদিন অসংখ্য ভক্ত এখানে পুজো দিতে আসেন। কার্তিকের অমাবস্যায় কালীপুজোর দিন সেই সংখ্যাটা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। উৎসবের চেহারা নেয় সোনামুখী শহর।
আরও পড়ুন: নদী পেরিয়ে ডাকাতরা আসত পুজো দিতে! এখনও মশাল জ্বালিয়ে হয় পুজো