ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: এখানে পুজোর বয়স ১ হাজার বছরেরও বেশি। কিন্তু কোনও দেবীমূর্তি নেই। ভক্তদের বিশ্বাস, এখানে মা গর্ভগৃহে অবস্থান করছেন। বীরভূমের নানুরের দাসকলগ্রামের কালীপুজো (Daskalgram Kali Puja 2023) পাষাণ কালীর পুজো বলেও পরিচিত। এখানে পাষাণ মা, গ্রামের দেবী হিসেবেই পূজিতা। আর তাঁর আরাধনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও বহু বিশ্বাস।


বিশদ...
লক্ষণীয় বিষয় হল, এই পুজোয় কোনও মূর্তির আরাধনা হয় না। গোটা গ্রামে কোনও কালীমূর্তিও নেই। এমনকি গ্রামের কোনও বাসিন্দার বাড়িতে কোনও কালীমূর্তির ছবি পর্যন্ত নেই। এখানে পাষাণ কালী গ্রামের দেবী। স্থানীয়দের বিশ্বাস, প্রাচীনকালে জায়গাটি ঘন জঙ্গলে ভরা ছিল জায়গাটি। মানুষের বসবাস ছিল অন্যত্র। পরবর্তীকালে এক সাধু জঙ্গলের মধ্যে মা কালীর সন্ধান পান। তার পর ধীরে ধীরে সেখানে জনবসতি গড়ে ওঠে। স্থানীয় মানুষজন ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে, এখানে পুজো দিতে আসেন অনেকেই। নিত্য পুজোর পাশাপাশি, বিশেষ বিশেষ দিনে এখানে পুজো হয়ে থাকে। পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস, ভক্তি ভরে মায়ের কাছে মানত করলে তা পূর্ণ হয়। সেই আশাতেই দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমান ভক্তরা। আরও একটি বিষয় এখানে লক্ষণীয়। গ্রামের বাসিন্দারা এখনও পর্যন্ত আস্ত মুরগি নিয়ে গ্রামের চৌহদ্দির মধ্যে ঢোকেননি। কারও বাড়িতে মুরগি পোষাও হয় না। দেবী আরাধনার সঙ্গে লোকায়ত বিশ্বাসের যোগাযোগ তাঁদের জীবনের পরতে পরতে স্পষ্ট। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে এখানেও আরাধনার তোড়জোড় তুঙ্গে।


ফুল্লরা মায়ের আরাধনা...
কালীপুজো উপলক্ষ্যে সেজে উঠছে বীরভূমেরই লাভপুরের ফুল্লরা মায়ের মন্দির। ৫১ সতীপীঠের অন্যতম সতীপীঠ বীরভূমের লাভপুরের ফুল্লরা। কলকাতা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে লাভপুর। বীরভূম জেলার এই অংশ প্রাচীনকালে অট্টহাস নামে পরিচিত ছিল। এই নাম থেকেই মনে পড়ে, চণ্ডীর ব্যাখ্যায় রয়েছে, অসুর নিধনে দেবীর আবির্ভাব হওয়ার পর তিনি অট্টহাসিতে আকাশ বিদীর্ণ করছেন। অশুভের নিধনে শুভ শক্তির জয়োল্লাস। লোকে বলে, বীরাচারীদের ভূমি বীরভূম। পঞ্চসতীপীঠের অন্যতম লাভপুরের ফুল্লরা দেবী। ‘অট্টহাসে ওষ্ঠ পাতো দেবী সা ফুল্লরা স্মৃতা। বিশ্বেশো ভৈরব স্তত্র সর্বাভীষ্ট প্রদায়ক।’ মনের কামনাই দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন এই তিথিতে এখানে। পুজো দেন মায়ের মন্দিরে। সকাল থেকেই লাভপুর ফুল্লরা মন্দির চত্বরে ভিড় জমিয়েছেন পূণ্যার্থীরা। বিশেষ ভোগেরও আয়োজন করা হয় মন্দিরে। ত্রয়োদশী তিথিতে, মায়ের ভোগে থাকে, মাছ, মাংস, ডাল, দু রকম সবজি, টক, পাঁচ রকম ভাজা। পীঠ নির্নয় তন্ত্র মতে, এখানে সতীর ওষ্ঠ পড়েছিল। পীঠ নির্নীত হওয়ার শর্ত অনুসারে এখানে কাদর বা কোপাই নদী উত্তর বাহিনী। স্থানীয়ভাবে এর নাম লা ঘাটা। বোলপুর থেকে লাভপুর যাওয়ার পথে ডানহাতে নতুন এই তোরণ নির্মীয় হয়েছে। সব মিলিয়ে কালীপুজোর আমেজ বীরভূমের কোনায় কোনায়। 


আরও পড়ুন:দীপান্বিতা অমাবস্যায় দুর্গা বোধন রক্ষিত পরিবারে, কালীপুজোর দিনে চলে শিবদুর্গার আরাধনা