কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: কালীগ্রাম ( Kaligram )। পূর্ব বর্ধমানের ( Purba Bardhaman ) মেমারির এই গ্রামের নামই মা কালীর ( Kali Puja 2023 ) নামে। বলা হয়, এখানে কালী মায়েরা চার বোন। বড়মা, মেজমা, সেজমা, ছোটমা। এছাড়াও সিদ্ধেশ্বরী, বুড়িমা, ডাকাত কালী, খ্যাপা মা, আনন্দময়ী মা, বিভিন্ন নামে একশোরও বেশি পুজো হয় এই গ্রামে। কথিত আছে, ডাকাতদের হাত থেকে বাঁচতে মেমারির আমাদপুরের মহাশ্মশানে শক্তির আরাধনা করতেন বণিকরা। সেই থেকেই এই গ্রামে কালীপুজো চলে আসছে। কালীপুজোকে কেন্দ্র করে উৎসবের আনন্দে মেতে উঠে গোটা গ্রাম। শুধু কালী নয়, এখানে ভৈরবের পুজোও হয়। লোকমুখে তাই আমাদপুরের নামই হয়ে গেছে কালীগ্রাম। মা কালীর পাশাপাশি, এই গ্রামে মহাকাল ভৈরবেরও পুজো হয়। দীপান্বিতা কালীপুজো উপলক্ষ্যে বিশেষ পুজো ও ভোগের ব্যবস্থা করেন উদ্যোক্তারা।
মেমারির এই পুজোগুলির সূচনা ঘিরে নানা কাহিনি । মেমারির আমাদপুর এক প্রাচীন জনপথ। কথিত আছে, পূর্বে এখান দিয়েই প্রবাহিত ছিল বেহুলা নদী। বর্তমানে তা মজে গিয়ে খালের আকার নিয়েছে। এক সময়ে বাণিজ্য তরী নাকি যাতায়াত করত এখান দিয়ে। সেই সময়ে বণিকরা প্রায়শই দস্যুদের কবলে পড়ে সর্বস্ব খোয়াতেন। সেই সময়ে আমাদপুরে বেহুলা নদীর ধারেই ছিল মহাশ্মশান। সেখানে এক সাধু থাকতেন। সেই সাধু শ্মশানে কালীসাধনা করতেন। দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে বণিকরা এই শ্মশানে কালী মায়ের পুজো দিতেন। শোনা যায়, এর পর থেকেই তাঁরা দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে শুরু করেন। তখন থেকেই দেবীর প্রতি বিশ্বাস জন্মায়। মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পরে দিকে দিকে।
গ্রামে ঢুকলে প্রথমেই প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার বড় মা-এর দর্শন পাওয়া যায়। আরও কিছুটা এগোলেই রয়েছেন প্রায় সম উচ্চতার মেজ মা। তার আশপাশে রয়েছে সেজ মা ও ছোট মা-এর মন্দির।
আর এই চার কালীমাকে ঘিরে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে পূজিত হন দেবী কালী।
দূর দূরান্ত থেকে মানুষ কালী পুজোর দিনে হাজির হন এই গ্রামে। বিসর্জনের সময়ে বড়, মেজ, সেজ আর ছোটমাকে চতুর্দোলায় করে শোভাযাত্রা বের হয়। সারা রাত গোটা গ্রাম ঘোরানোর পরে ভোর বেলায় বিসর্জন হয়। এই দেবীরা ছাড়াও আরও গ্রামে যত দেবী রয়েছেন, সকলকেই একসঙ্গে চতুর্দোলা করে একটির পর আর একটি— এইভাবে লাইন দিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। আশেপাশের জেলা থেকে মানুষজন এসে ভিড় জমান। এককথায় কালীপুজোকে ঘিরে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে কচিকাঁচা থেকে বয়স্করা।
আরও পড়ুন :