অনির্বাণ বিশ্বাস, মুর্শিদাবাদ: লালগোলার চৈতন্যময়ী রাজেশ্বরী মা কালী মন্দির। ১৮১৩ সালে রাজা রাও রামশঙ্কর রায় উত্তরপ্রদেশ এর গাজীপুর জেলার পালিগ্রাম থেকে লালগোলায় আসেন। রাজবাড়ীর পাশে কলকলি নদী থেকে কাঠামো পান। এবং সেই কাঠামোতে মূর্তি গড়ে পুজো শুরু করেন।


১৮৭৪ সালে মুর্শিদাবাদের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টপাধ্যায় মহারাজা রাও যোগিন্দ্র নারায়ণ রায়ের আমন্ত্রণে রাজবাড়িতে যান।সেখানে তিনি মাস তিনেক ছিলেন এবং সেখানেই তিনি বন্দেমাতরম লেখেন ও আনন্দমঠের সূচনা করেন।  প্রাচীনকাল থেকে একই প্রথা মেনে আজও পুজো হয়ে আসছে এই মন্দিরে। শুধু মাত্র বলি প্রথা বন্ধ হয়েছে। এখানে মূর্তির কোনও পরিবর্তন হয় না। প্রথম দিন থেকে আজও একই মূর্তিতে পুজো হয়ে আসছে মা কালীর। 


প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কালীপুজো ঘিরে রয়েছে নানা রোমহর্ষক কাহিনি। জেলা বর্ধমানে পুজোর কাহিনি একঅর্থে অনন্য। কারণ, এর রয়েছে অন্য কাহিনি। বিদ্যাসুন্দর কালীবাড়ির অলৌকিক কাহিনির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক প্রেম-কাহিনি। কথিত আছে, রাজার কন্যা বিদ্যা ও পূজারি সুন্দরের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন স্বয়ং মা কালী। 


 বর্ধমানের মহারাজ তেজ চাঁদের (Burdwan Maharaj Tej Chand) সময় ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছিল দামোদর তীরবর্তী তেজগঞ্জ এলাকা। এখানেই মা কালীর পুজো করতেন রাজা। মন্দিরে দেওয়া হত নরবলি। অন্যায় অত্যাচার করলে রাজা তাদের মন্দিরে নিয়ে এসে নরবলি দিতেন দেবীর সামনে। সেই সময় এই মন্দিরের নাম ছিল দক্ষিণ মশানী কালী। আর এই মন্দিরেরই পূজারি ছিলেন- জনৈক সুন্দর।


কথিত রয়েছে, তেজ চাঁদের আমলে বর্ধমানে রাজার মন্দিরগুলিতে রাজকন্যা বিদ্যার হাতে গাঁথা মালা প্রতিদিন নিয়ে যেতেন মালিনি মাসি। তেমনি একদিন তিনি ফুলের মালা নিয়ে যান মশানী কালী মন্দিরে। সেই মালা দেখেই পূজারি মালিনি মাসির কাছে জানতে চান, এমন সুন্দর মালা কে গেঁথেছেন এবং মালিনি মাসির কাছে তিনি জানতে পারেন রাজকন্যা বিদ্যার কথা। বিদ্যার সঙ্গে তাঁর দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন মালিনি মাসিকে।


আরও পড়ুন, কারামন্ত্রীর পর এবার বিষ্ণুপুরের বিধায়কের চালকল ও অফিসে আয়কর হানা


কথিত আছে, তাঁকে দেখার জন্য পূজারি এই মন্দির থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত সুরঙ্গ পথ তৈরি করেছিলেন। সেই সুরঙ্গ পথ দিয়েই বিদ্যার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন সুন্দর। গোপনে শুরু হয় তাঁদের প্রেম । কিন্তু, এই প্রেম কাহিনি বেশিদিন গোপন থাকেনি। রাজা প্রেমের কথা জানতে পেরে বিদ্যা-সুন্দরের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। বলি দেওয়ার জন্য তাঁদের নিয়ে আসা হয় দক্ষিণ মশানী মন্দিরে। কথিত আছে, কালীমন্দিরে বলি দেওয়ার সময় তাঁদের রক্ষা করেন মা কালী। বলি দেওয়ার আগের মুহূর্তে জ্ঞান হারান কাপালিক। আর সেই সুযোগে নিরুদ্দেশ হয়ে যান বিদ্যা ও সুন্দর (Vidya and Sundar)।