তুহিন অধিকারী, সোনামুখী (বাঁকুড়া) : একাধিক প্রাচীন কালীর পুজো হয় এখানে। যা ঘিরে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। বাঁকুড়া জেলার কালীক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত সোনামুখী। প্রাচীন এই পৌরশহরে কালীপুজোগুলির অন্যতম 'মা-ই-তো কালী'। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্তরা। মনোস্কামনা পূরণের আশায় তাঁরা পুজো দেন।

Continues below advertisement

কিন্তু এই কালীর এই রকম নামকরণ কেন ? এ নিয়ে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, ইংরাজির ১৭৪২ সাল, বাংলায় ১১৪৯। বাংলায় তখন বর্গী আক্রমণ চলছে। বর্গীদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এমন শহর এখানে নেই বললেই চলে। সেই সময়কালে সোনামুখীতে পা রাখেন মারাঠা সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত। 'মারাঠা সেনাপতি সদলবলে বিষ্ণুপুর থেকে সরাসরি সোনামুখীতে পৌঁছেছেন', এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন সোনামুখীর মানুষ ভয়ে তটস্থ। দরজা-জানালা বন্ধ করে এক প্রকার গৃহবন্দী হয়ে পড়েন তাঁরা। সেই সময় কোনও এক নিঝুম সন্ধেয় মারাঠা সেনাপতি এক পর্ণ কুঠির সম্মুখে হাড়িকাঠের সামনে এক বৃদ্ধকে পুজো করতে দেখেন। সেই বৃদ্ধকে মারতে খড়্গ তুলে ধরতেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন মারমুখী ভাস্কর পণ্ডিত। আর তাঁর মনে হতে লাগল, উদ্যত খড়্গ যেন পিছন থেকে কেউ টেনে রেখেছে। বর্গীদল উত্তর দিল, না পিছন থেকে তো কেউ খড়্গ টেনে নেই। কিন্তু ওই পূজারি বৃদ্ধ প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয়ে মন্দিরের ঘটের জল ছিটিয়ে ভাস্কর পণ্ডিতের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনেন। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়ে খড়্গ হাত থেকে নামাতে পারলেন মারাঠি সেনাপতি। এরপর ভাস্কর পণ্ডিত ওই বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করেন এখানে কি কোনও দেবতা আছেন ? বৃদ্ধ উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। মা কালী। তখন ভাস্কর পণ্ডিত চিৎকার করে ওঠেন 'মা-ই-তো কালী'। সেই থেকেই এই কালী প্রতিমার নাম হয়ে যায় 'মা-ই-তো কালী'।

এছাড়াও একই সঙ্গে এমন জনশ্রুতিও রয়েছে, ভাস্কর পণ্ডিত ওই জায়গা ছেড়ে যাওয়ার আগে এই খড়্গ বৃদ্ধের হাতে দিয়ে যান। তার পর থেকে আজও সোনামুখীর মানুষের অত্যন্ত ভরসা, আর বিশ্বাস আর ভক্তির অন্যতম নাম "মা-ই-তো কালী"। 

Continues below advertisement

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেদিনের সেই পর্ণ কুঠির বিশালাকার মন্দিরে পরিণত হয়েছে। নিত্যদিন অসংখ্য ভক্ত এখানে পুজো দিতে আসেন। কার্তিকেয় অমাবস্যায় কালীপুজোর দিন সেই সংখ্যাটা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। উৎসবের চেহারা নেয় সোনামুখী শহর জুড়ে।

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে