বীরভূম জেলার রামপুরহাট (Rampurhat) শহরের কাছেই মন্দির নগরী তারাপীঠ। মা তারার মন্দির ও মন্দির-সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত এই সিদ্ধপীঠ। মানুষের বিশ্বাস, এখানে সাধনা করলে সাধক জ্ঞান, আনন্দ ও সিদ্ধি লাভ করেন সাধক। শুধু তন্ত্রসাধকরা নন, সাধারণ ভক্তকূলও মায়ের অশেষ কৃপালাভ করে থাকেন এই দিন সাধনা করলে। ভাদ্রমাসের এই অমাবস্যার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। এই দিনটিকে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে নানা গল্প। অনেক বিশ্বাস, অনেক লোককথা, বহু কিংবদন্তি মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে এই  তিথিতে তারাপীঠের পুজোকে ঘিরে।  কথিত আছে, সাধক বামাক্ষেপা কৌশিকী অমাবস্যার দিনে তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করেন। তারাপীঠ শ্মশানের শ্বেত শিমূল তলায় সাধনা করেন তিনি।


পঞ্জিকা অনুসারে,



  • আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর, ২৭ ভাদ্র  কৌশিকী অমাবস্যা।

  • ভোর ৫.৩১ মিনিটে শুরু হচ্ছে কৌশিকী অমাবস্যা।

  • অমাবস্যার তিথি শেষ হবে ১৫ সেপ্টেম্বরে। 

    কৌশিকী শব্দের (Kaushiki Amavasya) আভিধানিক অর্থ, আদ্যাশক্তির রূপ বিশেষ। পুরাণ মতে, কৌশিকী রূপেই শুম্ভ নিশুম্ভকে বধ করেছিলেন আদ্যাশক্তি। শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে বলা আছে পুরাকালে একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে প্রজাপতি ব্রহ্মা তাঁদের বর দেন, কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবেন না৷ শুধু কোনও অ-যোনি সম্ভূত নারী তাঁদের বধ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন এক নারী, যিনি মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি, তাঁর হাতেই এই দুই অসুর ভাই-এর মৃত্যু হবে। (Religion)

    সতী যখন দক্ষ যজ্ঞ স্থলে দেহত্যাগ করেছিলেন, তাই কালিকা-জন্মে তাঁর রং ছিল কালো মেঘের মতো। তাই শিব তাঁকে কালিকা বলে ডাকতেন।  এবার শুম্ভ-নিশুম্ভর হাত থেকে রক্ষা করতে শিব যখন সকলের সামনেই কালিকাকে ডেকে ওঠেন, তখন গোঁসা হয় তাঁর। কেন সকলের সামনে কালিকা বলে ডাকলেন মহাদেব? মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যা করলেন। তপস্যার শেষে তাঁর গায়ের রঙ হল পূর্ণিমার চাঁদের মতো। আর ওই কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়। তিনিই দেবী কৌশিকী। সেই  দেবী কৌশিকীই এই অমাবস্যা তিথিতে শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা। 

    এই তিথিতে বৌদ্ধ ও হিন্দু দুই সাধনাতেই বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। তন্ত্র মতে এই রাতকে 'তারা রাত্রি'ও বলা হয়৷ এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরক দুইয়ের দরজা মুহূর্তের জন্য খোলে ও সাধক নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন৷ হিন্দু তন্ত্রমতে, এই তিথিতে কঠোর তপস্যায় আশাতীত ফল মেলে। সাধক কুলকুণ্ডলিনী চক্রকে জয় করতে পারে।