লক্ষ্মীপুজো অনেকেই নিজে হাতে করেন। পুরোহিতের সাহায্য না নিয়ে গৃহলক্ষ্মীর হাতেই শ্রীলক্ষ্মীর বন্দনা হয়। প্রতি পুজোরই বেশ কিছু বিধি নিয়ম থাকে। বর্তমানে অনেকেই আচার নিয়ম অত নিপুণ ভাবে জানেন না। তবে মনে মনে হয়ত তাঁরা মা লক্ষ্মীকে নিজেই আরাধনা করতে চান, তাদের জন্যই এবিপি লাইভ কথা বলেছিল প্রাক্তন অধ্যাপিকা, পুরোহিত ড. নন্দিনী ভৌমিকের সঙ্গে। তিনিই জানালেন , নিজে-নিজে লক্ষ্মীপুজো করার ইচ্ছে থাকলে কীভাবে সহজে তা করা সম্ভব। আর উপকরণ যাই থাক না কেন, অন্তরের ভক্তিই পুজোর প্রধান উপকরণ।
মা লক্ষ্মীর পট বা ধান, যাতেই আরাধনা করুন, তা সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে হবে। মা লক্ষ্মীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বেদীতে স্থাপন করে আলপনা দিতে হবে। মা লক্ষ্মীর পদচিহ্ন আঁকতে হবে। তারপর পুজোর পালা।
কোনও শুভ কাজের শুরুতেই আচমন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আচমন অর্থ দেহমন শুদ্ধি। আধ্যাত্মিক কাজ শুরুর আগে বিষ্ণুকে স্মরণ করে দেহ ও মন শুদ্ধ করে নিতে হয়।
আচমন মন্ত্র
আচমন করার সময় "ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু" এই মন্ত্রটি তিনবার উচ্চারণ করা হয়। এর অর্থ হল, শ্রীবিষ্ণুকে স্মরণ করে শরীর ও মনকে শুদ্ধ করা এবং সব অপবিত্রতা দূর করা। এর মন্ত্রটি হল -
ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্। ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা।যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।।
পুজো পদ্ধতি
এরপর গুরুপ্রণাম করতে হবে। তারপর শ্রীনারায়ণের উদ্দেশে গন্ধ-পুষ্প-ধূপ-দীপ-সচন্দন তুলসি ও নৈবেদ্য নিবেদন করতে হবে।
এরপর মা লক্ষ্মীর ঘটস্থাপনা করতে হবে আচরণ বিধি মেনে। আচরণ বিধি পূজাপদ্ধতি বইতেই পাওয়া যায়। উপকরণ হিসেবে লাগবে গঙ্গা মাটি, ঘট, গঙ্গাজল, আম্রপল্লব, তেল-সিঁদুর, হরিতকি ও সুপারি। সেই সঙ্গে ধান।
এবার সংকল্পের পালা। পরিবারের সকলের মঙ্গলকামনায় সংকল্প করতে হবে। এরপর মা লক্ষ্মীকে পুজো করার পালা। গণেশাদি পঞ্চোপচার পুজো করতে হবে। ধূপ-দীপ-সচন্দন পুষ্প- নৈবেদ্য নিবেদন করতে হবে। গণেশ , শিব, দুর্গা, বিষ্ণু, সূর্যের পুজো হবে।
এরপর লক্ষ্মীর ধ্যান করতে হবে। মন্ত্রটি হল - ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং। রৌক্নোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু। পুত্রদারাদিভি: সহ।
এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে বীজমন্ত্র শ্রীং মন্ত্র জপ করতে হবে। মন্ত্রটি হল:'ওঁ হ্রীং শ্রীং কমলে কমলালয়ে প্রসীদ প্রসীদ শ্রীং হ্রীং শ্রীং মহালক্ষ্মী নমঃ'
এরপর মা লক্ষ্মীকে যা প্রাণ চায় , তার সঙ্গে যা যা নিবেদন করার করতে হবে। চাল , কলা, মিষ্টি, গুড়, পাটালি, সেই সঙ্গে ফল মূল আর যা ভোগ আপনি মায়ের জন্য রেঁধেছেন, তা নিবেদন করতে হবে।
তারপর পুষ্পাঞ্জলি। মন্ত্রটি হল - 'নমস্তে সর্বদেবানং বরদাসি হরিপ্রিয়ে। যা গতিস্তং প্রপন্নানং স্বা মে ভূয়াত্বদর্চবাৎ।।'
প্রণাম মন্ত্র
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভেসর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোস্তুতে।।
এরপর দেবীর আরতি করুন। শান্তি মন্ত্রোচ্চারণ করে মায়ের কাছে নিজের, পরিবারের শান্তিকামনা করুন। সবশেষে পড়ুন লক্ষ্মীর পাঁচালি। তাহলেই পুজো সুসম্পন্ন হবে।