কলকাতা: 'সংসারে কেমন করে থাকতে হয় জানো, যখন যেমন তখন তেমন, যাকে যেমন তাকে তেমন, যেখানে যেমন সেখানে তেমন।'- এই ছিল সন্তানদের প্রতি মায়ের কতগুলি উপদেশ। যা আজও জীবনের পাথেয় হয়ে চলে। ১৯২০ সালের ২০ জুলাই কলকাতার বাগবাজারে (Baghbazar) তিরোধান হয় মা সারদা দেবীর (Sarada Devi) । তাঁর সন্তানদের কাছে আজও তিনি জগৎজননী। শ্রীশ্রীমায়ের জীবন ও বাণী নিয়ে স্বামী দেবরাজানন্দজী মহারাজের একটি আলোচনা থেকে জানা যায় মায়ের কিছু উক্তির কথা।
স্বামী দেবরাজানন্দজী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, স্বামী ঈশানানন্দজি মহারাজ মায়ের দীর্ঘদিনের সেবক, তাঁর একটি বই আছে 'মাতৃসান্নিধ্যে'। সেই বইতে তিনি লিখছেন মাকে যখন সকলে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে গিয়েছেন, তখন বরদামহারাজ (ঈশানানন্দ মহারাজ)কে ডেকে বললেন, তুমি আরও অনেক ফুল নিয়ে এসো। যে সকল সন্তানেরা আমার কাছে আসতে পারেনি, তাঁদের সকলের হয়ে তুমি পুষ্পাঞ্জলি দাও।' মহারাজ লিখছেন, তাঁর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিলে যে মুক্তির দ্বার খুলে যায় তা মা নিজেই বলে গিয়েছেন।
এই বইতেই ঈশানানন্দজি মহারাজ মায়ের পাঁচটি উক্তি (Quotes) সংগ্রহ করে রেখেছেন। প্রতিটি মানুষের জীবনে চলার পথে এই বাণী অমোঘ সত্য রূপেই বিরাজ করবে এমনটাই মত তাঁর। এই উক্তিকে অবশ্য মা বলেছেন মায়ের মুখস্থ নয়, এই উক্তি তাঁর অন্ত:স্থ।
- প্রথম উক্তি- সন্তোষের সময় ধন নেই, আর সহ্যর সমান গুণ নেই।
- দ্বিতীয় উক্তি- নিজের ব্যক্তিত্ব ভুলে গিয়ে স্বরূপত্ব বুঝতে চেষ্টা কর।
- তৃতীয় উক্তি- যে সর্বদা ইষ্ট চিন্তা করে, তার অনিষ্ট আসবে কোথা দিয়ে
- চতুর্থ উক্তি- সকলের ওপর সমান ভালবাসা হয় কী করে জানো? যাকে ভালবাসবে তার কাছে প্রতিদান কিছু চাইবে না। তবেই সকলের ওপর সমান ভালবাসা হয়।
- পঞ্চম উক্তি- "যার ভিতর দয়া নেই, সে কি মানুষ?"
মহারাজ বলেছেন, মায়ের দ্বিতীয় উক্তিটিই হল জীবনের সাধন। ওই চেষ্টায় প্রতিটি মানুষকে পৌঁছতে হবে। আর বাকি উক্তি ওই স্বরূপত্বকে বুঝতে পারার সাধন। ঠাকুরের ভাষায় 'কাঁচা আমি'কে ত্যাগ করে অনন্তে নিজের স্বত্ত্বাকে তুলে ধরতে হবে। এটি আমার, এটি অপরের-এসব করে নিজেকে ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখি আমরা। তাই শ্রীমা তাঁর সন্তানদের উদ্দেশে বলা গিয়েছিলেন, 'যদি শান্তি চাও মা, কারও দোষ দেখোনা। দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার করে নিতে শেখো, কেউ পর নয় মা, জগৎ তোমার।'