পূর্ণকুম্ভের প্রস্তুতি তুঙ্গে । পুণ্যলাভের আশায় প্রয়াগরাজে এখন থেকেই মহা জনসমাগম। কুম্ভমেলায় জনজোয়ারের শুরু এখন থেকেই। গঙ্গাস্নানে সামিল হতে হাজির অসংখ্য নাগা সন্ন্যাসীরাও। হিন্দুমতে, এই পুণ্যলগ্নে গঙ্গায় পুণ্যস্নান করলে পাপ মোচন হয়৷ সেই লক্ষ্যেই প্রয়াগরাজে আসেন বহু মানুষ ও সন্ন্যাসীরা। সারাদেশ তো বটেই, বিশ্বের নানা প্রাপ্ত থেকেও বহু মানুষ যোগ দেন কুম্ভমেলায়৷ নাগা সন্ন্যাসীদের মতোই মেলা প্রাঙ্গনে থাকেন মহিলা নাগা সন্ন্যাসীরাও।
নাগা সাধুসন্তদের জীবনযাত্রা নিয়ে মানুষের আগ্রহ চিরকালীন। পুরুষ সাধুদের পাশাপাশি সন্ন্যাসিনীরাও আসেন মহাকুম্ভে । তাঁদের জীবনও কৃচ্ছসাধনের। অনেকেই এই তথ্য সম্পর্কে অবগত নন, কুম্ভস্নানে বহু নাগা সন্ন্যাসিনীও অংশ নেন। তাঁরাও গেরুয়া-বস্ত্র পরিহিতা। ত্যাগের জীবনযাপন। নাগা সাধুরা অন্যান্য সন্ন্যাসীদের থেকে কিছুটা আলাদা। তাঁরা একাধারে তপস্বী, অন্যদিকে এঁরা যুদ্ধ-দক্ষও। অস্ত্রশিক্ষাও করেন এঁরা। কথিত আছে, আদিগুরু শঙ্করাচার্যই নাগা সাধুদের শিক্ষা দিতেন হিন্দুধর্মকে রক্ষা করার। একদিকে চতক কঠোর আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ , অন্যদিকে ধর্ম রক্ষার্থে অস্ত্রশিক্ষা লাভ করতেন এঁরা। কাম ক্রোধ ত্যাগ করে কৃচ্ছসাধনের জীবন নেন এঁরা। মহিলা সাধুরাও তাই। পার্থিব , জাগতিক আকর্ষণ তাঁদের টানতে পারে না। ভাবাদর্শে মহিলা সাধুরাও একই পথের পথিক। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রকৃত সত্যি খুঁজে বের করাই তাঁদের লক্ষ্য। মহিলা নাগা সাধুরা এক বস্ত্র পরিহিতা। সেলাইবিনীন এক কাপড়ে শরীর আচ্ছাদিত করেন তাঁরা। মহিলা নাগা সন্ন্যাসীদের জীবন রহস্যে আবৃত। তাঁদের সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। এঁরা বছর ভর পাহাড়ে বা গুহায় সন্ন্যাস জীবন যাপন করেন বলে শোনা যায়। এঁরাও সংসার , পূর্বাশ্র, পূর্ব পরিচয় ত্যাগ করে সন্ন্যাসের পথ নেন। তারপর মহিলা নাগা সাধুদেরও কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পুরুষ নাগা সাধুদের লম্বা চুল থাকে, কিন্তু নারীরা সন্ন্যাস নেওয়ার সময় মাথার চুলও ত্যাগ করেন। তারপর তিনি সারা জীবন উৎসর্গ করে দেন ঈশ্বরের জন্য। একজন মহিলাকে নাগা সাধ্বী হওয়ার জন্য, তাকে প্রথমে ৬ থেকে ১২ বছরের ব্রহ্মচর্য পালন করতে হবে। এতে সফল হলে , তবেই সন্ন্যাস পান। নাগা সন্ন্যাসীদের আখড়ায় পুরুষ নাগা সন্ন্যাসীদের সমকক্ষই মহিলারা। তাঁদের সকলে ডাকেন মা বলে। কঠোর তপস্যার পরই নাগা সন্ন্যাসী হওয়া যায়।
৫৪ দিন ধরে চলবে এই কুম্ভ মেলা৷ পুণ্যার্থীর সংখ্যা কোটি ছাড়াবে অনুমান করা হচ্ছে৷ ফলে কড়া নিরাপত্তাবলয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে মেলা চত্ত্বর৷ সাধারণ কুম্ভমেলা প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত হয়৷। প্রতি ছয় বছর অন্তর হরিদ্বার ও প্রয়াগে অর্ধকুম্ভ আয়োজিত হয়৷। প্রতি বারো বছর অন্তর প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জ্বয়িনী ও নাসিকে আয়োজিত হয় পূর্ণকুম্ভ ৷