কলকাতা: কাত্যায়নী হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিশেষ রূপ এবং মহাশক্তির অংশ বিশেষ। তিনি নবদুর্গা নামে পরিচিত দুর্গার নয়টি বিশিষ্ট রূপের মধ্যে ষষ্ঠ। নবরাত্রি উৎসবের সময় তাঁর পূজা প্রচলিত শাক্তধর্ম মতে, তিনি মহাশক্তির একটি ভীষণা রূপ এবং ভদ্রকালী বা চণ্ডীর মতো যুদ্ধদেবী রূপে পূজিতা। 


লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, তাঁর গাত্রবর্ণ দুর্গার মতোই লাল। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে রচিত পতঞ্জলির মহাভাষ্য গ্রন্থে তাঁকে মহাশক্তির আদিরূপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কৃষ্ণ যজুর্বেদের অন্তর্গত তৈত্তিরীয় আরণ্যকে দেবী কাত্যায়নীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। স্কন্দ,বামন ও কালিকা পুরাণ অনুযায়ী, মহিষাসুর বধের নিমিত্ত দেবগণের ক্রোধতেজ থেকে তাঁর জন্ম। ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে এই পৌরাণিক ঘটনাটির প্রেক্ষাপটেই বাৎসরিক দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। খ্রিষ্টীয় পঞ্চম-ষষ্ঠ শতাব্দী নাগাদ রচিত মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত দেবী মাহাত্ম্যম্ ও একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থে কাত্যায়নীর দিব্যলীলা বর্ণিত হয়েছে। একাধিক বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থ এবং তন্ত্রগ্রন্থেও কাত্যায়নীর উল্লেখ পাওয়া যায়।


আর.জি. ভাণ্ডারকরের মতে, কাত্য জাতির পূজিতা ছিলেন বলে দেবী কাত্যায়নী নামে অভিহিতা হন। মূর্তিতত্ত্ব তন্ত্র সারে বর্ণিত ধ্যানমন্ত্রে কাত্যায়নীকে দশভূজা মহিষাসুর মর্দিনীর রূপেই বর্ণনা করা হয়েছে। 


এই গ্রন্থে বর্ণিত অষ্টাদশভূজা দেবী দিব্যাবরণভূষিতা। হারশোভিতাসর্বাঙ্গী মুকুটোজ্জ্বলভূষণা। কাত্যায়নী স্তূয়সে ত্বং বরমগ্রে প্রযচ্ছসি অষ্টাদশভূজা , দিব্যাবরণ ভূষিতা, সর্বাঙ্গে হারশোভিতা, উজ্জ্বল মুকুট ভূষণা দেবী কাত্যায়নী আপনার স্তব করি,আমাকে বর প্রদান করুন। পৌরাণিক উপাখ্যান প্রাচীন কিংবদন্তি অনুযায়ী, দেবী কাত্যবংশীয় ঋষি কাত্যায়নের কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করে কাত্যায়নী নামে পরিচিতা হন। মতান্তরে, কালিকা পুরাণে বলা হয়েছে,ঋষি কাত্যায়ন প্রথম দেবীর পূজা করেন; তাই তিনি কাত্যায়নী নামে অভিহিতা হন।                                  


১) হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, দেবী দুর্গা কাত্যায়নী রূপ নিয়েই মহিষাসুরকে হত্যা করেছিলেন। 
২) মাতা কাত্যায়নীর চারটি হাত। 
৩) ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে, মাতা কাত্যায়নী লাল রঙ এবং মধু খুব পছন্দ করেন। 
৪) বিশ্বাস করা হয় যে, যারা নিষ্ঠার সহিত মায়ের উপাসনা করেন তারা বিশেষ আশীর্বাদ পান। 
৫) তিনি তাঁর ভক্তদের জীবন থেকে সমস্ত সমস্যা, রোগ, যন্ত্রণা এবং দুঃখ দূর করেন।