কলকাতা : বাংলা বছরের শেষ ষষ্ঠী ব্রত হল নীল ষষ্ঠী। চড়কের আগের দিন, অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন পালন করা হয় এই ব্রত। বাংলার মায়েদের মধ্যে এই ব্রত প্রচলন রয়েছে। সন্তানের মঙ্গল কামনায় পালিত হয় এই ব্রত। এতে মা- ষষ্ঠীর পুজোর পাশাপাশি নিবেদন করা হয় মহাদেবকে। মায়েরা উপবাস ভঙ্গ করেন শিবপুজো করে। 



নীল ষষ্ঠী কবে


এই বছর আগামী ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার এই ব্রত পালনের দিন। বাংলার তারিখ ২৯ চৈত্র ১৪২৯।চৈত্র মাসের নীলষষ্ঠীর ব্রত পালনের রীতি বহুকালের। ব্রতকথায় পুত্রসন্তানের মঙ্গলকামনার কথা বলা হলেও, কন্যা-পুত্র উভয়ের কল্যাণের জন্যই মায়েরা পুজো করে থাকেন। চড়ক পুজোর আগের দিন মহা আড়ম্বরে মন্দিরে মন্দিরে পূজিত হন মহাদেব। 


এই পুজো করতে অবশ্যই লাগবে বেলপাতা। কারণ শিবের পুজো বেলপাতা ছাড়া হয় না। এছাড়া এদিন শিবকে ৫ ফল নিবেদন করার রীতি আছে। যার মধ্যে অবশ্যই থাকবে ডাব, বেল, শশা সহ নানা ফল। এছাড়া আতপচাল, চন্দন, সুগন্ধি, ঘৃত সহযোগে পুজো করা হয়। মহাদেবের মাথায় ঢালা হয় দুধ। নীলষষ্ঠীর দিন উপোস করে থেকে সন্ধেয় পুজো দিয়ে জল খেতে হয়।  শিবের মাথায় ডাবের জল ঢালার রীতি আছে । মা ষষ্ঠীকে পুজো নিবেদন তো করতেই হবে, সেই সঙ্গে নিষ্ঠা ভরে শিবকে প্রণাম করে উপবাস ভঙ্গ করতে হয়। 


সন্তানের মঙ্গলকামনায় এই ব্রত পালিত হয়। সন্তানের দীর্ঘায়ু কামনা করেন মায়েরা। অনেকে সন্তানলাভের জন্যও ষষ্ঠীর ব্রত করেন। বিশ্বাস, নীলষষ্ঠী ব্রত করলে তাদের সন্তানদের অমঙ্গল হয় না। 

নীল ষষ্ঠীর ব্রত 


এক বামুন আর বামুনী ছিল। সে অনেককাল আগের কথা। তাঁরা এমনিতে ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠ ছিল কিন্তু তারা নীলের ব্রত করত না। তাদের সংসারে একাধিক সন্তান আসে। কিন্তু তারা কেউই বেশিদিন বাঁচত না। বারবার সন্তানহারা হয় ওই দম্পতি। সংসারের সব সুখ তাদের কাছে ফিকে হয়ে যায়। মনের দুঃখে তারা কাশীবাসী হয়। একদিন কাশীতে গঙ্গায় ডুব দিয়ে তারা পাড়ে বসে দুঃখ করছে। এমন সময় ঘটল সেই ঘটনা। কোথা থেকে এক বুড়ে এসে তাদের কাছে জানতে চাইল  'তোরা কাঁদছিস কেন?'


বামুনী তাদের বারবার সন্তানদের মৃত্যুর কথা জানাল ওই বুড়িকে। তিনি আসলে ছিলেন ছদ্মবেশে মা ষষ্ঠী । তিনি তখন জিজ্ঞাসা করলেন,তারা নীল ষষ্ঠী ব্রত করে কিনা । তারা তো অবাক। বামুনী জিগ্যেস করল, সে আবার কী। বুড়ি তখন জানাল,পুরো চৈত্র মাস সন্ন্যাস যাপন করে করে সংক্রান্তির আগের দিন ষষ্ঠী ও শিবের পুজো করে উপবাস ভঙ্গ করতে হয়। সেদিন আমিষ ভক্ষণ চলবে না। শরবত খেয়ে উপবাস ভাঙতে হবে। তবেই খুশি হবেন শিব ঠাকুর। আর মঙ্গল হবে সন্তানদের।  এই কথা বলে মা ষষ্ঠী কোথায় যেন মিলিয়ে গেলেন। 


তারপর বামুন-বামুনী নীলের ব্রত পান করল বাড়ি ফিরে। এরপর তাদের ঘরে এল সন্তান। তারা সুখে সংসার করতে লাগল। সেই থেকে পালন করা শুরু হল নীল ষষ্ঠী ৷

সন্তানের মায়েরা এই ব্রত রাখলে সন্তানের মঙ্গল হবে বলেই বিশ্বাস !