কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান : এই মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা কাহিনি। শোনা যায় জনশ্রুতিও। তেমনই একটি হল, এই দেবীর দর্শন পাওয়া ছিল অত্যন্ত দুর্লভ । তাই নাকি এই দেবীর নাম 'দুর্লভা কালী'। প্রায় ৩০০ বছর আগে ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছিল এই মন্দির।
কথিত আছে, ডাকাতরাও এই মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন। মন্দিরের পিছনেই রয়েছে গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারীর সমাধি । নিয়ম মেনে প্রতিদিন সেখানে ভোগ দেওয়া হয় এখনও। তবে দেবীর নাম ‘দুর্লভা’ হওয়া নিয়ে একটি অন্য গল্প প্রচলিত আছে। মন্দিরের বর্তমান সেবায়েতরা জানান, গোকুলানন্দের দেহত্যাগের পরে দুর্লভ ভট্টাচার্য নামে এক পুরোহিতকে নিয়োগ করেন রাজা বিজয়চাঁদ। পুরোহিত দুর্লভ ভট্টাচার্যের নামেই দেবী এখানে দুর্লভা কালী নামে পরিচিত।
এই মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা কাহিনি। একদা গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী তাঁর পৈতের পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন এবং ঘুরতে ঘুরতে জঙ্গল ঘেরা লাকুড্ডিতে আসেন ।এখানেই শুরু করেন মা কালীর আরাধনা। এক দিন দেবী গোকুলানন্দকে স্বপ্নাদেশ দেন। তিনি স্থানীয় পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিলেন, সেই সময়ে তাঁর পায়ে একটি পাথরে ঠেকে। তিনি ওই পাথরটিকে তুলে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন। সন্ন্যাসী গোকুলানন্দ তাঁর পরেই লাকুড্ডি জঙ্গলে মা দুর্লভার আরাধনা শুরু করেন। প্রথমে তালপাতার ছাউনি করে মা দুর্লভা কালীর আরাধনা শুরু হয়।
সেই পুজো শুরুর পর, বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব এক দিন জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে দেখতে পান, তালপাতার ছাউনিতে এক সন্ন্যাসী বসে সাধনা করছেন।কথিত আছে, সেইদিন ছিল অমাবস্যার রাত। বিজয়চাঁদ মহতাবকে তিনি অমাবস্যাতেও পূর্ণিমার চাঁদ দেখিয়ে ছিলেন। তাঁর এই অলৌকিক ক্ষমতায় মুগ্ধ হয়ে মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব তাঁকে মন্দির তৈরির জন্য জমি দান করেন। লুকুড্ডি এলাকায় গড়ে ওঠে মন্দির। সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেবী দুর্লভার মূর্তি। মন্দিরের মধ্যে রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসনও। পাশেই তৈরি করা হয় বেশ কয়েকটি শিব মন্দির।
দুর্গাপুজোর সময় চার দিন ধরে মা দুর্লভার পুজো হয় ও দীপান্বিতা কালীপুজোর সময় রাতভর পুজো হয় এখানে।
দেবীর মূর্তিটি প্রথমে মাটির ছিল। পরে তা অষ্টধাতুর তৈরি করানো হয়। সেই মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়। এর পরে বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব বেল কাঠের মূর্তি তৈরি করে দেন। কিন্তু সময়ের ফেরে ওই বেলকাঠেও ঘূণ ধরে। ভট্টাচার্য পরিবারের তরফে সিমেন্টের দেবী মূর্তি তৈরি করা হয়। কিন্তু, বছর খানেকের মধ্যে সিমেন্টের তৈরি মূর্তিতে ফাটল দেখা দেয়। কথিত আছে, রাজস্থান থেকে ভট্টাচার্য পরিবার শ্বেতপাথরের মূর্তি নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন মা দুর্লভাকে। বর্তমানে দেবী এখানে শ্বেতপাথরের মূর্তিতে পূজিতা হন।